• পরিবেশ থেকে নেওয়া 'ঋণ', শোধ করতে বছর বছর নিজের সঞ্চয় ভেঙে চলেছেন এই বিধায়ক ...
    আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিবেশকে সবুজ ও সুস্থ রাখা  এবং পরিবেশ থেকে নেওয়া অক্সিজেনের 'ঋণ' শোধ করার জন্য  রবিবার থেকে লালগোলা বিধানসভা এলাকায় শুরু হল 'ঘরে ঘরে বৃক্ষরোপণ, দুই লক্ষের লক্ষ্য পূরণ' কর্মসূচি। 

    লালগোলার তৃণমূল বিধায়ক মহম্মদ আলির উদ্যোগে তাঁর বিধানসভা এলাকায় গতবছর এক লক্ষ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে শুরু করেছিলেন এই কর্মসূচি। তৃণমূল বিধায়কের লক্ষ্য এবছর আরও এক লক্ষ গাছ লালগোলাবাসীর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বিধানসভায় এলাকায় ২ লক্ষ গাছ রোপনের কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা। 

    মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি বলেন,' ভারতবর্ষের বনাঞ্চলের অনুপাত মাত্র ২২ শতাংশ। এই অনুপাত হওয়া উচিত ছিল কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ। তৃণমূল সরকার এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে পশ্চিমবঙ্গে বনাঞ্চল ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ। এই রাজ্যের জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি হলেও রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক উদ্যোগে এখন বনাঞ্চলের অনুপাত ১৯ শতাংশের   বেশি হয়েছে। '

    তিনি বলেন,' একজন সুস্থ মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকার সময় যে পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করে তা উৎপাদন করতে অন্তত সাতটি পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষ থেকে উৎপাদিত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের সকলেরই কর্তব্য কমপক্ষে সাতটি গাছ লাগিয়ে সারা জীবন পরিচর্যা করে তাদের বাঁচিয়ে রাখা।' ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ভারতবর্ষে বর্তমানে মাথা পিছু গাছের সংখ্যা মাত্র ২৮। অথচ কানাডায় এই সংখ্যা ৮৯৫৩।  আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশে মাথাপিছু গাছের সংখ্যা মাত্র ছয় এবং চীনে এই সংখ্যা ১০২। তবে লালগোলা বিধানসভা এলাকাকে লক্ষ লক্ষ গাছের সবুজ চাদরে মুড়ে দেওয়ার জন্য বিধায়ক কোনও সরকারি সাহায্য নেন না। সরকারি হাইস্কুলের প্রাক্তন  শিক্ষক মহম্মদ আলি ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের জমানো যে টাকা পেয়েছেন তা দিয়েই তিনি সবুজের সমারোহ বাড়িয়ে চলেছেন। 

    মহম্মদ আলি জানান,' আমার এক ছেলে বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়ে এবং এক ছেলে সদ্য গ্রাজুয়েট হয়েছে।বাড়িতে স্ত্রীও রয়েছেন। তাঁদের প্রতি দায়িত্ব পালন করার পর আমার অবসরকালীন প্রাপ্য যে টাকা সঞ্চিত রয়েছে তা দিয়েই আমি লালগোলা বিধানসভা এলাকাকে সবুজে ভরে দিতে চাই। এই কাজ করতে প্রত্যেক বছর আমার  প্রায় ১২ লক্ষ টাকা করে খরচ হয়।' তিনি বলেন,' গত বছর লালগোলাবাসীকে কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, জামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু  কে কোন ধরনের গাছ নেবে এই নিয়ে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় এবছর আমরা  সকলকে মেহগনি গাছ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' মেহগনি গাছগুলি পূর্ণবয়স্ক হলে কাঠ বিক্রি করে গাছের মালিক সেই টাকা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বা বিয়ের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া গাছগুলো থেকে সারা জীবন পাওয়া যাবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন।   তৃণমূল বিধায়কের এই উদ্যোগকে  বাস্তবায়িত করার জন্য 'আমাদের লালগোলা' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও  এগিয়ে এসেছেন।  ওই সংগঠনের সম্পাদক নির্ঝর সিংহ বলেন,' লালগোলা বিধানসভায় এক লক্ষের কাছাকাছি বাড়ি রয়েছে এবং ২৫৬ টি বুথ  রয়েছে। প্রত্যেকটি বুথে আমাদের সংগঠনের কমপক্ষে একজন করে সদস্য রয়েছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে আমরা আমাদের সংগঠনের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে একটি করে গাছ পৌঁছে দেব। গাছ নেওয়ার জন্য লালগোলার কোনও মানুষকে কোথাও যেতে হবে না।' তৃণমূল বিধায়ক মহম্মদ আলি বলেন,'গাছ বিতরণের কর্মসূচির জন্য ফ্লেক্স বা পোস্টার যা তৈরি করা হয় তার কোনওটিই আমার ব্যক্তিগত প্রচারের নয়। এর একমাত্র উদ্দেশ্য অন্যরাও যাতে গাছ লাগানো, তাকে বাঁচানো এবং বিতরণের কাজে উৎসাহিত হন। গত বছর ১ লক্ষ গাছ বিতরণের কর্মসূচি হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন আগামী দিন হয়তো আর এটা হবে না। কিন্তু আমি এই কর্মসূচি প্রত্যেক বছর চালিয়ে যেতে চাই। আমার উদ্দেশ্য এই ধরনের কাজ দেখে যাতে বিভিন্ন জেলা এবং রাজ্যের বিধায়ক, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরাও অনুপ্রাণিত হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে গাছ লাগানো এবং বিতরণের কাজে এগিয়ে আসেন।' তিনি জানান,' একবারে এক লপ্তে  প্রায় এক লক্ষ মেহগনি গাছ পাওয়া যথেষ্ট মুশকিল ছিল। তবে গীতাঞ্জলি নার্সারির সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রেখে  তাদেরকে কয়েক ক্ষেপে টাকা দিয়ে এক লপ্তে সমস্ত গাছ জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছি। '
  • Link to this news (আজকাল)