• জঙ্গলে জন্ম, শহরে বিখ্যাত, মেদিনীপুরে মাছ-মাংসের থেকেও পছন্দের এই কাড়ান ছাতু
    এই সময় | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • ছাতু তো সবাই চেনেন, কিন্তু কাড়ান ছাতু হয়তো অনেকেরই অচেনা। তবে মটন, চিকেনের স্বাদ ভুলে যাবেন, রসিয়ে কষিয়ে এই কাড়ান ছাতু রাঁধলে। নাম অনেক, তবে মুখে মুখে এর খ্যাতি ছাতু বলেই। সপ্তাহখানেক ধরে মেদিনীপুর শহরের কলেজ রোড জুড়ে বসেছে ‘ছাতুর মেলা’। জঙ্গলমহল থেকে কেজি কেজি ছাতু তুলে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন মেদিনীপুর গ্রামীণ, শালবনি, গড়বেতা, গোয়ালতোড় প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা।

    যদিও দাম শুনে অনেকেই ‘ছ্যাঁকা’ খাচ্ছেন। শনিবার পর্যন্ত কেজি প্রতি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই ছাতু। রবিবার, রাধাষ্টমীর দিন অবশ্য মেদিনীপুর শহরে এর আমদানি একটু বেশিই হয়েছে। সকাল থেকে ৭০০-৮০০ টাকা করে বিক্রি হলেও, দুপুরে কেজি প্রতি ৫০০-৬০০ টাকায় মিলেছে মেদিনীপুরবাসীর অন্যতম প্রিয় এই কাড়ান ছাতু বা দুর্গা ছাতু বা অষ্টমী ছাতু।

    রবিবারের দুপুরে মেদিনীপুর শহরের সূর্যনগরের বাসিন্দা নির্মল কুমার দাস এসেছিলেন ছাতুর মেলায়। তিনি বলেন, ‘আজ কিছুটা কম দামেই পেয়ে গেলাম। ৫০০ টাকায় ১ কেজি কিনলাম। প্রচুর আমদানি হয়েছে এ দিন। দু’দিন আগে কিনেছি ৮০০ টাকা কেজি দরে।’

    মেদিনীপুর শহরের শিক্ষক গৌতমকুমার ভকত জানান, দাম যেমনই হাঁকাক, এই ছাতু তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই কেনা শুরু করে দিয়েছেন। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা সুদীপকুমার খাঁড়া, মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত, রাকেশ দাস, রীতা বেরা, অর্পিতা সাহাদেরও একই বক্তব্য। তাঁরা বলছেন, ‘এই ছাতুর জন্ম জঙ্গলে, তবে খ্যাতি কিন্তু শহরেও মোটেই কম নয়।’

    স্থানভেদে এই কাড়ান ছাতুর নানা নাম। দুর্গাপুজোর আগে পাওয়া যায় বলে অনেকে একে দুর্গা ছাতুও বলে থাকেন। আবার জন্মাষ্টমীর পর থেকেই এর আমদানি শুরু হয় এবং রাধাষ্টমীর সময়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বলে অনেকে একে অষ্টমী ছাতুও বলে। এই ক’দিন মেদিনীপুর শহরবাসীর পাতে মাছ মাংসের আগে জায়গা পায় এই ছাতু।

    কেউ এই ছাতুর ভাজা খেতে পছন্দ করেন, কেউ আবার মাংসের মতো করেই কষিয়ে রান্না করেন। আবার অনেকে পোস্ত দিয়েও রান্না করেন— বলছিলেন গৌতম, অর্পিতারা। তবে, মেদিনীপুর শহরে এর দাম একটু বেশি হলেও জঙ্গলমহলে অর্থাৎ শালবনি, পিড়াকাটা, চাঁদড়া, গুড়গুড়িপাল প্রভৃতি এলাকায় ৪০০-৫০০ টাকাতেও (প্রতি কেজি) এই ছাতু পাওয়া যায়। কখনও আবার দাম আরও কমে যায় বলে জানান পিড়াকাটার বাসিন্দা আদিত্য ঘোষ, প্রশান্ত পলমল, অরূপ নন্দীরা। তবে, বাজার চলতি মাশরুমের থেকে এর স্বাদ অনেক ভালো বলে কেজি প্রতি ৮০০-১০০০ টাকা দিয়েও খাদ্যরসিকরা তা কেনেন।

    শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী গবেষক রাকেশ সিংহদেব জানান, জঙ্গলমহলের পর্ণমোচী শাল জঙ্গল ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার ঝোপ, জমির আল বা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষের কাঁচা বাড়িতেও মাটি ফুঁড়ে বর্ষাকালের শেষের দিকে, বিশেষ করে জন্মাষ্টমী তিথির পাশাপাশি সময় থেকেই কাড়ান ছাতুর (Termitomyces Heimii) রমরমা দেখা যায়।

    ভাদ্র-আশ্বিন মাসেই এই ছাতু সর্বাধিক পাওয়া যায়। উইঢিবি এবং তার আশেপাশের ল্যাটেরাইট মাটির উপরে বেশির ভাগ সময়ে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে মাটি ভেদ করে সাদা হয়ে ফুটে থাকে এই ছাতু। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের কাছে এই সময়ে এই ছাতু বিশেষ অর্থকরী বা বাণিজ্যিক উপাদানও হয়ে ওঠে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরই নয়, এই সময়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামেও এই ছাতু পাওয়া যায়।

  • Link to this news (এই সময়)