অর্ণব আইচ: কান টানলেই আসবে মাথা। তাই গোরক্ষপুরের দেওরিয়ায় ‘কান’ টেনেই ‘মাথা’, অর্থাৎ কৃষ্ণনগরে তরুণী ঈশিতা মল্লিকের খুনের মূল অভিযুক্ত দেশরাজ সিং ও তার খুড়তুতো ভাই নীতিনপ্রতাপ সিংকে জালে ফেলার চেষ্টা করছে পুলিশ। গোরক্ষপুরের ঠাকুর পরিবারের এই দুই সদস্যই কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়িতে ভরদুপুরে কলেজ পড়ুয়া তরুণীকে গুলি করে খুনের ষড়যন্ত্র করে বলে অভিযোগ। তাদের সন্ধান পেতে শুক্রবার দেওরিয়া শহরের কাছেই একটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে এক যুবককে আটক করে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের একটি টিম। ওই যুবকের সঙ্গে খুনের ষড়যন্ত্রকারী নীতিনপ্রতাপ সিংয়ের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। ওই যুবকই নীতিনের হাতে ঈশিতাকে খুনের অস্ত্রটি তুলে দেয় কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। তাকে জেরার পর দেওরিয়া ও গোরক্ষপুরের রাত পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় চলে পুলিশের তল্লাশি। অভিযোগ, খুনের অভিযুক্তদের পালানোর চেষ্টা থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে মদত জোগানোর ক্ষেত্রে পুরো পরিবারই অভিযুক্তদের সঙ্গে রয়েছে।
এদিন তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, “খুনের অভিযুক্তর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। তদন্ত প্রতিদিন অগ্রগতির পথে এগোচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া গিয়েছে।” পুলিশের মতে, তদন্তের জাল গুটিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো ধরা পড়তে পারে নীতিন ও দেশরাজ। এদিকে, ঈশিতা মল্লিক খুনের ঘটনার তদন্তে রাজ্য পুলিশের উপরেই পূর্ণ আস্থা রয়েছে পরিবারের। শনিবার নিজেদের বাড়িতে বসেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঈশিতার মা ও বাবা জানিয়ে দেন, জেলা পুলিশের তদন্তে তাঁরা সন্তুষ্ট। তাঁরা সিবিআই চান না। তাঁদের দাবি, যেভাবে তদন্ত চলছে, সেভাবেই যেন তদন্ত চলতে থাকে। দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক অভিযুক্তকে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন।
ঈশিতার বাবা দুলাল মল্লিক বলেন, “দেশরাজকে চিনতাম না। তার সঙ্গে মেয়ের যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানতাম না। পুলিশের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও পুলিশ সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করেছে।” ঈশিতার মা কুসুম মল্লিক বলেন, “ঘটনার দিন আমাকেও তাক করে গুলি চালানো হয়েছিল, ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। নইলে আমাকে ও ছোট ছেলেকে খুন করতে পারত।” পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ঠাকুর পরিবারের মদতে ‘সোর্স’-এর মধ্যেই রয়েছে ভূত। তাই যে ব্যক্তিরা পুলিশকে পলাতকদের খবর দিচ্ছেন, তাঁদের একাংশের কাছ থেকেই দেওরিয়ার প্রভাবশালী ঠাকুর পরিবারের ‘সিং’রা জেনে নিচ্ছেন, কোথায় পুলিশ তল্লাশি করতে চলেছে। গ্রামে সেই জ্ঞাতিদের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে দেশরাজকে পালানোয় সাহায্য করছেন ঠাকুর পরিবারের দঙ্গল সিং, মঙ্গল সিংয়ের লোকেরা।