বিজেপির গোষ্ঠীসংঘর্ষে রণক্ষেত্র চাঁচল, গুরুতর আহত দুই, ভয়ে জানলা-দরজা বন্ধ করে আটকে রইলেন স্থানীয়রা...
আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের রক্তাক্ত গোষ্ঠী কোন্দলের সাক্ষী মালদা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চাঁচল সদর ব্লকের আশ্রমপাড়া এলাকায় বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, ঘটনায় রক্তাক্ত অবস্থায় দুই বিজেপি নেতা-সহ সাতজন আহত হয়েছেন। গুরুতর জখম দুই নেতাকে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে চাঁচল থানার পুলিশ। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য প্রসেনজিৎ শর্মা ও বিজেপি সদস্য পিয়াঙ্কা হালদার সরকারের স্বামী তথা বিজেপি নেতা সুমিত সরকারের মধ্যে। এলাকায় দু’জনকে একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই চেনে সকলে। পুরনো বিবাদকেই কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফের মুখোমুখি হন দুই নেতা ও তাদের অনুগামীরা।
প্রথমে কথা কাটাকাটি শুরু হলেও বচসা বাড়তে বাড়তে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। মুহূর্তের মধ্যেই আশ্রমপাড়া এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের একাধিক কর্মী আহত হন। মাথায় গুরুতর আঘাত পান দুই নেতা। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়িঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চাঁচল থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন প্রসেনজিৎ শর্মা ও সুমিত সরকার। অন্যদিকে, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার তাদের চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হবে। ইতিমধ্যেই, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে চাঁচল থানার পুলিশ।
এদিকে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রাস্তায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গড়ানোয় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল। জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের ভিতরে এই ধরনের দ্বন্দ্ব ক্রমেই সংগঠনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠী থাকতে পারে। চাঁচল এলাকায় বিরোধীরাও রয়েছে। তারাই মাঝেমধ্যে গণ্ডগোল পাকায়। যদি দলের মধ্যে যদি কোনও সমস্যা থাকে, নিশ্চয়ই আমরা বসে সমাধান করব’। অন্যদিকে, চাঁচলের বিধায়ক নীহার ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন, ‘এখানে একজন সাংসদ আছেন, যিনি মানুষের ভোট নিয়ে দু’বার নির্বাচিত হলেও মানুষের বিপদে পাশে থাকেন না। কর্মীরাই যদি আক্রান্ত হন অথচ নেতৃত্ব পাশে না আসে, তবে মানুষ কিসের ভরসায় ভোট দেবেন? বিজেপির ভেতরের এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বই আজ সর্বনাশ ডেকে আনছে’।
চাঁচলের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ফের বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল যা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। উল্লেখ্য, দলীয় পতাকা, সেইসঙ্গে হাতে বড় বড় লাঠি, মুখে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিয়ে শুক্রবার সকালে একদল বিজেপি সমর্থকরা তাণ্ডব চালান রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর পোস্টার ধংসের পাশাপাশি যেখানে যেখানে 'ভোট চুরি'র অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সেই সম্পর্কিত ব্যানার ও পোস্টার বিজেপির এই সমর্থকরা ছিঁড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। দপ্তরের সামনে ছেঁড়া পোস্টার জালিয়ে দেওয়া হয়। সেইসময় ভিতরে থাকা অল্প সংখ্যক কংগ্রেস কর্মীরা এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন। তৈরি হয় রীতিমত মারামারির পরিস্থিতি। এই ঘটনাকে ঘিরেও চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে।