• উত্তরবঙ্গ দখলে সাত জেলাকে শক্তিশালী করার নির্দেশ অভিষেকের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • ‘উত্তরবঙ্গের মাটিতে ঘাসফুলের বিস্তার বাড়াতে এখনই সংগঠনকে শক্ত করতে হবে’— দলীয় নেতা-কর্মীদের এই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে সাতটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বিধানসভা ভোটের জন্য বিশেষ রোডম্যাপ বেঁধে দিয়েছেন তিনি। লক্ষ্য একটাই— ২০২৬ সালের নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গের মাটিতে ঘাসফুলের জমি আরও বিস্তার করা।

    দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন সপ্তাহ ধরে ক্যামাক স্ট্রিটের দপ্তরে একে একে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং (সমতল), দুই দিনাজপুর ও মালদহ জেলার নেতাদের ডেকে তৃণমূলের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা খতিয়ে দেখেন অভিষেক। গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। প্রত্যেক জেলা সম্পর্কে দলীয় নেতাদের পৃথক পৃথক বার্তা দিয়েছেন দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

    পাশাপাশি সব জেলার ক্ষেত্রে কিছু অভিন্ন বার্তাও দিয়েছেন। তা হল, সবাইকে বুথ কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। প্রতিটি জেলাকে আলাদা আলাদা লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হলেও মূল নির্দেশ একই— বুথভিত্তিক সংগঠনকে মজবুত করা এবং সরকারি প্রকল্পের প্রচারে জোর দেওয়া। সেখানে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার কাজ খতিয়ে দেখতে হবে।  প্রয়োজনে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং তাঁদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে ভোটাররা হয়রানির শিকার না হন।

    অভিষেক পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে প্রতিটি বুথ ও বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করেন। দলীয় নেতাদের জানান, কোথায় সামান্য ব্যবধানে হার হয়েছে, কোথায় ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখা যায়নি, আর কোন জায়গায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে। কোচবিহারে যেখানে লোকসভা ভোটে আশাতীত সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল, সেখানে সেই ধারা বিধানসভায় ধরে রাখার বার্তা দিয়েছেন তিনি। জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভোটের ব্যবধান কমে আসায় সেই জায়গাগুলিতে ‘টার্গেটেড’ ভোট প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে চা বলয়ের সংগঠনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও আরও বুথভিত্তিক কাজের উপর জোর দিতে বলেছেন অভিষেক।

    আবার দার্জিলিং (সমতল) জেলা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লোকসভার দলনেতা। তিনি দলের পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে নেতৃত্বকে সতর্ক করেছেন। পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর মালদহে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলকে ভোটে খারাপ ফলাফলের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত সেই বিভাজন দূর করার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

    রাজনৈতিক মহলের মতে, উত্তরবঙ্গের ৪৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বর্তমানে তৃণমূলের হাতে রয়েছে ২০টি আসন। কিন্তু অভিষেকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সংগঠনগত ঘাটতি মেরামত করে এই সংখ্যা ২০২৬-এ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে দল।

    উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ৯টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বের বিচারে ৭টি জেলা তৃণমূলের কাছে উল্লেখযোগ্য। সেই তালিকায় রয়েছে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং (সমতল), দুই দিনাজপুর এবং মালদহ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলকে শূন্য করে দিয়েছিল বিজেপি। দু’বছর পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সেই উত্তরে বিজেপির দাপটের মধ্যেও বেশ কিছু আসন জিতেছিল তৃণমূল।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)