‘অমিত শাহের মাথা কেটে নেওয়া উচিত’— তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর এই মন্তব্য ঘিরে রাজ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেশবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগ তুলে মহুয়ার বিরুদ্ধে নদিয়ার কোতয়ালি থানায় এফআইআর দায়ের করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত ২৬ আগস্ট ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণনগরে একটি পাট্টা বিলি অনুষ্ঠানে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহুয়া অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের সীমান্তরক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যদি দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত না থাকে এবং অন্য দেশের শয়ে শয়ে, লাখে লাখে মানুষ এই দেশে ঢুকে পড়ে, তাহলে প্রথমেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা কেটে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে রাখা উচিত।’
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি-র নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়। নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার আনুষ্ঠানিকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। দলের রাজ্য নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারাও মহুয়ার বিরুদ্ধে সুর চড়ান। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করে বলেন, ‘মহুয়াকে দেখলেই বোঝা যায়, ইংরেজি জানলেই সঠিক শিক্ষা হয় না।’
রাজনৈতিক মহলে এই বিতর্ক ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, শাসক দল ইচ্ছে করেই এ ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য করছে, যাতে ভোটের আগে জনমত প্রভাবিত করা যায়। তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। অবশ্য তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহুয়ার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বিজেপি ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে।
উল্লেখ্য, আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহল যথেষ্ট সরগরম। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, ভোটের স্বার্থে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। পালটা তৃণমূলের বক্তব্য, সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব যেহেতু কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত বিএসএফের, তাই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় তাদেরই নিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, মহুয়ার মন্তব্য ও তার জেরে শুরু হওয়া বিতর্ক ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরকে রাজনৈতিক সুবিধা এনে দিতে পারে। অন্যদিকে, এই ঘটনার মাধ্যমে তৃণমূলেরও কৌশলগত বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।