• চাকরিপ্রার্থীদের টাকা নেওয়ার অভিযোগ নস্যাৎ, জমি লেনদেনের যুক্তি জীবনকৃষ্ণের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নতুন মোড়। মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে একাধিক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে দফায় দফায় ৪০ লক্ষ টাকার বেশি সংগ্রহের অভিযোগ তুলেছে ইডি। তবে গ্রেপ্তার বিধায়কের দাবি, এই অর্থের সঙ্গে চাকরির কোনও যোগ নেই। বরং এগুলি নাকি ‘জমি সংক্রান্ত লেনদেনের টাকা’।

    ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে বিধায়ক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল লেনদেনের তথ্য মিলেছে। অভিযোগ, সঞ্জিত মণ্ডল নামে এক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা, নবীন মণ্ডলের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা, রানা মণ্ডলের কাছ থেকে দু’দফায় আট লক্ষ টাকা, প্রণয়চন্দ্র বিশ্বাসের কাছ থেকে তিন দফায় ১২ লক্ষ টাকা, অমিত বিশ্বাসের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা এবং আরিফ ইকবালের কাছ থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, দীপক দাস নামের এক চাকরিপ্রার্থী দু’দফায় মোট ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। অভিযোগ, চাকরি না মেলায় তিনি টাকা ফেরত চান। ২০২২ সালে তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হলেও, বাকি টাকা চাইলে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।

    তবে জীবনকৃষ্ণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্য যুক্তি খাড়া করেছেন। ইডির জেরায় তিনি জানান, ‘এসবই জমি কেনাবেচার টাকা। চাকরির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।’ যদিও তৃণমূল বিধায়কের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়ক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, এই লেনদেনের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির সরাসরি যোগ রয়েছে।

    ইডির দাবি, এই সব অভিযোগের বয়ান এবং লেনদেনের নথি হাতে এসেছে তাঁদের কাছে। সংস্থার এক আধিকারিকের কথায়, ‘বিভিন্ন সময় চাকরির টোপ দিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিধায়ক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা।’

    প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট জীবনকৃষ্ণের গ্রামের বাড়ি কান্দির আন্দি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইডি। এর আগে এই মামলায় সিবিআইও তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। বর্তমানে তিনি ইডির হেফাজতে রয়েছেন।

    তদন্তকারীদের দাবি, জীবনকৃষ্ণের অতীত আচরণও সন্দেহজনক। সিবিআই যখন প্রথমবার তাঁকে ধরতে যায়, তখন তিনি তড়িঘড়ি করে নিজের দুটি মোবাইল পুকুরে ছুড়ে দেন। তিনদিন ধরে তল্লাশি চালানোর পর পুকুরের জল ছেঁচে সেই মোবাইল উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি ইডির হানার সময়ও পালানোর চেষ্টা করেন বিধায়ক। তাতে হোঁচট খেয়ে কাদায় পড়ে যান তিনি। আর তাঁর মোবাইল গিয়ে পড়ে পাশের পরিত্যক্ত একটি নর্দমায়। পরে তাঁকে আটক করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।

    ইডি সূত্রের খবর, শুধু বিধায়ক নন, তাঁর আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ওপরও কড়া নজর রাখা হয়েছে। এমনকি বীরভূমে তাঁর পিসি তথা তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয় এবং তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের মতে, যতই অস্বীকার করা হোক, লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ এবং একাধিক সাক্ষীর বয়ান স্পষ্ট করে দিচ্ছে, নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জীবনকৃষ্ণ সাহা ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)