বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে বুথের সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে ৯৫ হাজার
দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের সুবিধা নিশ্চিত করতে বড়সড় পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। জনবিন্যাসের পরিবর্তন এবং বুথভিত্তিক ভোটারসংখ্যার সীমা কমানোর সিদ্ধান্তের জেরে এবার রাজ্যে প্রায় ১৪ হাজার নতুন বুথ তৈরি হতে চলেছে। ফলে মোট বুথের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৯৫ হাজারে গিয়ে ঠেকবে বলে জানিয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী দপ্তর। সেজন্য উন্নত করা হবে পরিকাঠামো।
নতুন বুথ চিহ্নিতকরণ ও পুনর্বিন্যাস নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে ডাকা হয়েছে সর্বদল বৈঠক। এই বৈঠকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং সাংসদ পার্থ ভৌমিক। রাজ্যের সিইও মনোজ আগরওয়াল জানান, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুথ বিন্যাস নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি লিখিত আকারে অভিযোগ জমা দিতে পারবে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বৈঠকের শেষে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘বুথের পুনর্বিন্যাস নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা বলেছি, অতিরিক্ত বুথ যেন একই ভোটকেন্দ্রে হয়। ভোটারকে দু’কিলোমিটার দূরে গিয়ে যেন ভোট দিতে না হয়।’
জানা গিয়েছে, শহরাঞ্চলে ভোটদানের হার বাড়াতে ৬০০ বা তার বেশি ভোটার থাকা হাইরাইজ বা আবাসনে বুথ স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। আগে একটি বুথে সর্বোচ্চ ১,৫০০ ভোটার রাখা হলেও, এখন সেই সীমা কমিয়ে ১,২০০ করা হয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বুথের সংখ্যা বাড়ছে।
সূত্রের খবর, রাজ্যে বর্তমানে মোট বুথের সংখ্যা ৮০,৬৮০ থেকে বেড়ে ইতিমধ্যেই ৯৪ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও বুথ পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা চলছে, যাতে প্রত্যন্ত এলাকার ভোটারদেরও ভোটদানে সুবিধা হয়।
শুধু বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, পরিকাঠামো উন্নয়নেও জোর দিচ্ছে কমিশন। প্রতিটি বুথে টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং বিশেষভাবে সক্ষম, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রবীণ ভোটারদের জন্য বসার সুবিধা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ মিলেছে, বহু বুথে এই মৌলিক সুবিধাগুলি নেই। সেই ঘাটতি পূরণ ও পরিকাঠামো পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারি সংস্থা ‘দ্য ম্যাকিন্টশ বার্ন লিমিটেড’-কে।
নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের মতে, বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে ভোটারদের অংশগ্রহণের হার বাড়বে এবং ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়ে উঠবে।
তবে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। রেফারি যদি ঠিক না হয়, তবে কী ভাবে হবে! কোনও রাজনৈতিক দলকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিশন নিরপেক্ষতা বজায় রাখুক। আজকেই বৈঠকে এসআইআর নিয়ে কোনও অ্যাজেন্ডা ছিল না। পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর হবে না। এসআইআর -এর নাম করে কাউকে সুবিধা দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে ১০ লক্ষ লোক নিয়ে আমরা কমিশনে যাব।’