• দলীয় নির্দেশকে ‘থোরাই কেয়ার’ এই নেতার, কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ...
    আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বে নির্দেশ পাওয়ার পরও সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা না দেওয়ায় এবার সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে 'কড়া পদক্ষেপ' করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। 

    গত ২৬ আগস্ট তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি এবং দলের রাজ্য সভাপতি  সুব্রতি বক্সীর সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বৈঠকের সময় সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মসিউর রহমানের বিষয়টি উঠে আসে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে  ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের মহিলা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে 'দুর্ব্যবহার' করার একাধিক অভিযোগ  অভিষেক ব্যানার্জির কানে যাওয়ায় তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। ওই বৈঠকেই তিনি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি খলিলুর রহমানকে নির্দেশ দেন  দ্রুত যেন মসিউর রহমানকে নিজের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার  নির্দেশ দেওয়া হয়। 

    সূত্রের খবর মসিউর রহমানকে ৭২ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু অভিযোগ, মসিউর দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে  নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াননি। তাই রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে এবার তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে দল।

    তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান শুক্রবার বলেন,'অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশ পাওয়ার পর ২৬ তারিখ মসিউর রহমানের সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছিল। সেই সময় আমি তাঁকে দলের  নির্দেশের কথা জানিয়ে সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম।' তিনি জানান,' এরপর গত ২৭ তারিখ আমি দলের সিদ্ধান্তের কথা তাঁকে লিখিতভাবে জানিয়েও দিয়েছিলাম। যদিও এরপরও মসিউর দলের সিদ্ধান্ত না মানায় শুক্রবার সকালে ফের একবার আমি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁকে দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও খবর আমার কাছে এসে পৌঁছয়নি। আজ রাতেই আমি ফের একবার লিখিতভাবে মসিউরকে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য  নির্দেশ দেব।' সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব জানার পর  সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির একাধিক কর্মাধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার মসিউর রহমান কলকাতায় গিয়েছিলেন। তিনি  অভিষেক ব্যানার্জি এবং মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে  দেখা করার চেষ্টা করলেও দলের কোনও শীর্ষ নেতা   বা পদাধিকারী মসিউর রহমানকে  সময় দেননি বলেই জানা গিয়েছে। 

    সূত্রের খবর, মসিউর রহমান এখন পরিকল্পনা করছেন যে সমস্ত মহিলাদের সঙ্গে তিনি একসময় 'দুর্ব্যবহার' করেছিলেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটমাট করে এ যাত্রায় পদে থেকে যাওয়ার জন্য। 

    খলিলুর রহমান বলেন,' আমিও শুনেছি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোথাও  গিয়েছিলেন।  কিন্তু তার ফল কী হয়েছে আমার জানা নেই। আমি মসিউর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছি, দলের নির্দেশকে সম্মান জানিয়ে আগে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে সরে দাড়িয়ে তিনি যেকোনও  নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন।  আমি তাঁকে আরও জানিয়েছি যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে রয়েছেন  তাই আগামী দিন দল নিশ্চয়ই তাঁর জন্য ভালো কিছু ভাববে। তবে তিনি যদি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ না মানেন তাহলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হব। ' প্রসঙ্গত,৩৩ আসন বিশিষ্ট সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনের সময়  তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া সভাপতি পদপ্রার্থীকে  বাম-কংগ্রেস-বিজেপির জোটের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে পরাজিত করে মসিউর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর  বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক গুরুতর অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগও  ছিল। 

    তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আসনে বসার পর মনিগ্রাম পঞ্চায়েতের  আর্থিক বাজেট পেশে বাধা দেওয়া এবং সেখানকার প্রধান আলিয়ারা বিবির উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে মসিউরের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই  সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কল্যাণ সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ফুলন সর্দার  আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তাঁকে 'কটু' কথা বলে প্রকাশ্যে অপমান করার  অভিযোগ উঠেছিল মসিউরের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে হাজার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সাগরদিঘিতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। 

    যদিও দলের শীর্ষ নেতৃত্বে দেখা না পাওয়ার পর থেকেই মসিউর সংবাদ মাধ্যমের অধরা হয়েই রয়ে গিয়েছেন। একাধিকবার তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

    সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে প্রথম আড়াই বছরের মেয়াদ এখনও শেষ না হওয়ায় এখনই মাসিউরের বিরুদ্ধে দল অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারবে না। তবে প্রশাসনিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু 'কড়া' পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)