স্ত্রী ও বাবার পরে শ্যালক, পিসেমশাই ও গাড়ির চালক! স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হেফাজতে থাকা বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা এঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং সম্পত্তিতেও কালো টাকা বিনিয়োগ করে সাদা করেছিলেন বলে সাম্প্রতিক তদন্তের পরে দাবি ইডির।
তদন্তকারীদের দাবি, জীবনকৃষ্ণ তাঁর এক শ্যালকের নামে কয়েক লক্ষ টাকা ‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছিলেন। দ্রুত ওই টাকা সুদ সমেত বৃদ্ধি করে সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, তাঁর এক গাড়িচালকের নামেও ব্যাঙ্কে টাকা রাখা হয়েছিল। ওই গাড়িচালকের নামে বেশ কিছু সম্পত্তিও কেনা হয়েছে বলে প্রাথমিক সূত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে সোমবার জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করার পর থেকেই ওই গাড়িচালকের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁদের দাবি।
ইডির দাবি, বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাসিন্দা, পুরসভার কাউন্সিলর জীবনকৃষ্ণের পিসি মায়া সাহার স্বামী সুব্রত সাহার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে অনুমান, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পিসেমশাইয়ের নামে থাকা ব্যবসা ও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছেন জীবনকৃষ্ণ।
তদন্তকারীদের কথায়, অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে আত্মীয়-পরিজন ও পরিচিতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন জীবনকৃষ্ণ। তার পরে ওই টাকা তুলে নিয়ে নামে-বেনামে সম্পত্তি ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করতেন। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির প্রায় ৩০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। ইডির এক কর্তা বলেন, “জীবনকৃষ্ণের আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত নথি জোগাড় করা হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে আসেন জীবনকৃষ্ণের পিসি মায়া এবং পিসেমশাই সুব্রত। সংবাদমাধ্যমকে মায়া বলেন, “আমরা কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার স্বামী ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করেন। আমাদের কোনও ব্যবসা ও সম্পত্তিতে জীবনকৃষ্ণের টাকা নেই।” তিনি এ-ও বলেন, “আমার দাদা অর্থাৎ জীবনকৃষ্ণের বাবা বিশ্বনাথ সাহার বয়ানের ভিত্তিতে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমি তদন্তে সহযোগিতা করছি। আমাকে ফের তলব করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।”
ইডি সূত্রে দাবি, সোমবার মায়ার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর সম্পত্তির দলিল উদ্ধার করা হয়। সুব্রত ও মায়ার মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সম্পত্তির দলিল অনুযায়ী টাকার উৎসের নথি এবং ১০ বছরের আয়কর রিটার্নের সমস্ত নথি-সহ তলব করা হয়েছিল। ওই সব নথির ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।