• ‘দু’নম্বরি’ রাজনীতি, শিক্ষায় মমতার তোপে বিরোধীরাই
    আনন্দবাজার | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষার ফল প্রকাশ থেকে কলেজে ভর্তিতে বিলম্ব, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে এই সব বিষয়ে বিরোধীদের উপরেই দায় চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলা করে ছাত্রদের স্বার্থ বিঘ্নিত করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করছে বিরোধীরা। ওবিসি সংরক্ষণ-সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার সূত্র টেনেও বিরোধীদের এক হাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাল্টা বিরোধীদের দাবি, বেকায়দায় পড়ে মুখ্যমন্ত্রী এখন সরকারের ‘ব্যর্থতা’র দায় বিরোধীদের উপরে চাপাচ্ছেন।

    মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ছাত্র-সমাবেশে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় ছিলেন নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়া বিরোধীরা। বিশেষত, সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য-সহ বামপন্থী আইনজীবীদের নাম না করে এ দিন আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা প্রথম থেকে সরব ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ছিল সেই ইঙ্গিতও। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “এক দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফল প্রকাশ আটকায়, অন্য দিকে বলে টিএমসিপি জবাব দাও! কেন কথায় কথায় আদালতে যাওয়া? তোমরা রাজনীতি নয়, পিছনের দরজা দিয়ে লড়াই করছো। আর সেটা করে নিয়োগ, ভর্তি সব আটকে রাখতে চাও। এ’রা দু’নম্বরি!” এর সঙ্গেই আইনি-জটিলতার জন্য জয়েন্টের ফল প্রকাশে দেরি হয়েছে, তা জানিয়ে ফের দুঃখপ্রকাশও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের উপরে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের বিষয়টিকে সামনে রেখে অভিষেক বলেছেন, “কলকাতা হাই কোর্টের বিচার-ব্যবস্থার একাংশ বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে অন্ধকার নামিয়ে আনতে চেয়েছিল। আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তা রুখেছি।’’

    শাসক দলের শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের ‘চাপ’ এড়িয়েই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা রাখার বিষয়ে অনড় ছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের নিয়োগ করা উপাচার্য শান্তা দত্ত। সেই বিষয়ে এ দিন মঞ্চ থেকে সরাসরি কিছু বলেননি মমতা। তবে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘কেউ কেউ দুষ্টুমি করে। আমরা মিষ্টিমি করি।’’ সেই প্রসঙ্গ ধরেই তাঁর বক্তব্য, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্যপাল নিয়োজিত উপাচার্য গবেষকদের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা চালু করেছি। ইউজিসি-র টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।”

    মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে যা বলছেন, সেই কথাগুলো তাঁর মঞ্চের কয়েকশো মিটারের মধ্যে যাঁরা দিনের পর দিন অবস্থান করছেন, যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে, তাঁদের কানে কানে গিয়ে বলুন! এই রাজ্যের সরকার চরম দুর্নীতিগ্রস্ত। রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্র আক্রান্ত হয়েছে, তৃণমূলের সর্বগ্রাসী লোভের শিকার হয়েছে। উনি যাই বলুন না কেন, বাংলার মানুষ তৃণমূলকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।” কোলাঘাটে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘ছাত্রদের কথা ওই মঞ্চে শোনা যায়নি। চাকরির কথা, মেধার কথা কেন আসবে এই মঞ্চে? উনি বলছেন, দু’কোটি লোককে দারিদ্রসীমার নীচে নামিয়েছেন। অর্থাৎ দু’কোটি লোককে গরিব করেছেন! ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কথা বলেছেন!’’

    সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “এক জন অপরাধী যে কাজ করে, মুখ্যমন্ত্রীও ঠিক তা-ই করেছেন। নিজের অপরাধ অস্বীকার করেছেন। টাকা উদ্ধার হয়েছে, চাকরি গিয়েছে। এর পরেও তিনি এ সব বলে চলেছেন। রাজ্য সরকার যদি সব আইন মেনে করেই থাকবে, তা হলে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ মতো রায় বার করে আনতে পারলেন না কেন? ওঁর দলের অপরাধ আদালতে প্রমাণিত। এখন উনি অন্যের উপরে দোষ চাপিয়ে বাঁচতে পারবেন না!”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)