আজকাল ওয়েবডেস্ক: শেয়ারে টাকা খাটালেই মিলবে বিরাট মুনাফা। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সজল পান্ডে সেই টাকার লোভে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন টাকা খাটাতে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি যে পা দিচ্ছেন ফাঁদে। ধীরে ধীরে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৫৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা তিনি দিয়ে দেন প্রতারকদের। পরে বুঝতে পেরে পুলিশে খবর দেন। অবশেষে, তদন্ত করে চন্দননগর সাইবার ক্রাইম থানার সেই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করেছে। জানা গিয়েছে, গত ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি সজল পান্ডে নামে ওই ব্যক্তি চন্দননগর সাইবার ক্রাইম থানায় মামলা করেন। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, ফেসবুকে শেয়ার ট্রেডিং সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে সজল পান্ডে প্রলোভিত হন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তাঁকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা বিনিয়োগ করতে বলা হয়, যেখানে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে।
তিনি ধাপে ধাপে মোট ৫৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পাঠান প্রতারকদের। কিন্তু মুনাফার টাকা তুলতে গেলে তিনি বুঝতে পারেন যে প্রতারিত হয়েছেন। এরপরেই চুঁচুড়া সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে পুলিশ সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারকদের সন্ধান পায়। গত ২৫ আগস্ট মালদা, হুগলির ব্যান্ডেল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি ও মন্দির বাজার এলাকা থেকে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতরা হলেন সিদ্দিক আলম চৌধুরী, অরুণ মণ্ডল, বিক্রম হালদার, প্রদ্যুত মণ্ডল ও সৌরজিৎ কর। তাদের চুঁচুড়া আদালতে পেশ করে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর পাশ বই, চেক বই, এটিএম কার্ড, কিউ আর কোড মেশিন, আধার কার্ড, মোবাইল এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের বার্তা, সাইবার ক্রাইম থেকে মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রলোভনে পা দিয়ে মানুষ এখনও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে মহারাষ্ট্রে বিয়ের ডিজিটাল নিমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা সকলকে চমকে দেয়। জানা গিয়েছে, ওই ডিজিটাল নিমন্ত্রণপত্রই মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার এক সরকারি কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা কেড়ে নিল। জানা গিয়েছে, সাইবার জালিয়াতির শিকার ওই ব্যক্তি একটি অজানা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ৩০ আগস্টের একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ পান। বার্তায় লেখা ছিল— “Welcome. Shadi mein zarur aaye । 30/08/2025. Love is the master key that opens the gate of happiness.” এর নিচে একটি বিয়ের কার্ডের মতো দেখতে একটি পিডিএফ ফাইল সংযুক্ত ছিল।
কিন্তু আসলে সেটি ছিল একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ (APK) ফাইল, যা বিয়ের কার্ডের ছদ্মবেশে মোবাইলে ঢুকে ব্যবহারকারীর সংবেদনশীল তথ্য চুরি করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ভুক্তভোগী ফাইলটিতে ক্লিক করার সঙ্গেসঙ্গেই সাইবার অপরাধীরা তার তথ্যের অ্যাক্সেস পায় এবং ১,৯০,০০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ঘটনায় হিঙ্গোলি থানায় এবং সাইবার সেল বিভাগে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিয়ের নিমন্ত্রণ প্রতারণা প্রথম সামনে আসে গত বছর, যখন বহু মানুষ এর ফাঁদে পা দিয়ে অর্থ হারান। প্রতারণার কৌশলটি হল। প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে বিয়ের নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়। ফাইলটি খুললেই APK ফোনে ডাউনলোড হয়ে যায়। এরপর সাইবার অপরাধীরা ভুক্তভোগীর ফোনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সেখানে থাকা তথ্য ব্যবহার করে আরও প্রতারণা চালাতে পারে। এমনকি ফোনের মালিক সেজে অন্যদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়।