তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজারো ছাত্র-যুবক। রাজনৈতিক মহল ধারণা করেছিল, এই মঞ্চ থেকেই হয়তো কলেজ নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে প্রসঙ্গে কোনও উচ্চবাচ্য না করলেও, নিজের ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা শুনিয়ে রোমহর্ষক এক ঘটনার কথা তুলে ধরলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই বর্ণনায় উঠে এলো সেদিনের সহিংস রাজনীতির ছবি, এবং সেই সঙ্গে বামেদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ।
তাঁর বক্তৃতায় উঠে এলো আশুতোষ কলেজের নির্বাচন ও তার রক্তাক্ত স্মৃতির কথা। মমতা জানান, সেদিন আশুতোষ কলেজের নির্বাচনে প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখেন, সিপিএমের কর্মীরা কলেজ থেকে দু’জন ছাত্রকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বক্সী দা আমাদের সিনিয়র ছিলেন। আমি তখন কলেজে পড়ি। আশুতোষ কলেজে ইলেকশন হচ্ছে। আমি বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলাম। বক্তৃতার ফাঁকে জল খেতে গিয়ে দেখি দু’জন ছাত্রকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে সিপিএমের গুন্ডারা।’
সেই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি ছুটে গিয়ে ওদের কলার চেপে ধরি। আমার সঙ্গে থাকা অশোকা দু’টো থাপ্পড় মারে। এরপর ছেলেদুটোকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু ওরা আমাকে বন্দুক নিয়ে তাড়া করল, পাইপগান নিয়ে তাড়া করল, স্টেনগান নিয়ে তাড়া করল।’
এরপর সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে কীভাবে মিষ্টির দোকানে লুকিয়ে মমতা নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, সেই ঘটনাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সুব্রত বক্সীর পাড়ার শ্রীহরি মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে একটি দোকানের পাশে থাকা একটি রেস্তরাঁয় লুকিয়েই প্রাণে বাঁচেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘বক্সীদাদের পাড়ায় শ্রীহরি মিষ্টান্ন ভান্ডার ছিল, এখনও আছে। তার পাশের রেস্তরাঁয় কয়েকজন বসে ছিল। তারা আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। ওরা আমাকে আর খুঁজে পায়নি। নাহলে সেদিনই আমাকে মেরে ফেলত।’
ছাত্রজীবনে সহিংস রাজনীতির আরও দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে হাজরার অশান্তির ঘটনাও মনে করালেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর গলায় তখনও শোনা গেল রক্তাক্ত অতীতের সেই যন্ত্রণার কথা। তিনি বলেন, ‘আমার মাথায় ৪৬টা সেলাই রয়েছে। ব্রেন অপারেশন করতে হয়েছিল। ডান হাতের অর্ধেক হাড় নেই। প্রথমবার মাথায় আঘাত করতেই গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। দ্বিতীয়বার আঘাত করায় পুরো শরীর রক্তে ভেসে গিয়েছিল। তৃতীয়বার আঘাত করার সময় হাতটা মাথার ওপর চলে গিয়েছিল। ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’
নাম না করলেও, সিপিএম শাসনের সময়কার ‘দমননীতি’কেই নিশানা করলেন মমতা। ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক সহিংসতার যে অভিজ্ঞতা তিনি সেদিন লাভ করেছিলেন, তা এখন মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওরা আমাকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার এই বক্তব্য কেবল স্মৃতিচারণ নয়, বরং বর্তমান ছাত্র-যুব প্রজন্মকে বার্তা দেওয়া যে, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কখনও পিছপা হননি। একইসঙ্গে এটি বামেদের প্রতি রাজনৈতিক আক্রমণ হিসেবেও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা, যা আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।