মুম্বইয়ে ‘অত্যাচারে’ মৃত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের পাশে রাজ্য, দেওয়া হল আর্থিক সাহায্য
প্রতিদিন | ২৯ আগস্ট ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাসত: বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে! বাংলায় কথা বলায় জোটে পুলিশি ‘নির্যাতন’। ঠিকমতো খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হাবড়ার পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মণ্ডল। তারপর বাড়ি ফিরে চিকিৎসা চললেও ‘দেশহীন’ হওয়ার আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি। আতঙ্ক আর অসুস্থতার জোড়া ধাক্কায় গত রবিবার মৃত্যু হয় তাঁর। সহায়সম্বলহীন পরিবারের পাশে দাঁড়াল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার গোলাম মণ্ডলের হাবড়ার বাড়ি গিয়ে তাঁর মায়ের হাতে ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন বারাসতের সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
হাবড়ার পৃথিবা পঞ্চায়েতের আনোয়ারবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা গোলাম কর্মসূত্রে বিগত আট বছর মুম্বইয়ের নয়ানগর থানার লোধা রোডে থাকতেন। সেখানে একটি জিমে সাফাইয়ের কাজ করতেন। তাঁর সঙ্গে থাকতেন বোন, মেয়ে ও জামাই। মেয়ে-জামাইয়ের কন্যাসন্তানও থাকতেন তাঁর সঙ্গে। পরিবারের গুরুদায়িত্ব ছিল গোলামের উপর। স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল আগেই। হাবড়ার বাড়িতে থাকেন গোলামের ছেলে ও পুত্রবধূ। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তাল কাটে চলতি বছর ৯ জুন।
পরিবারের অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ নয়ানগর থানার পুলিশ গোলামকে তুলে নিয়ে যায়। অথচ দীর্ঘ আট বছরে বাংলাতেই তিনি কথা বলেছেন। আচমকাই এমন পরিবর্তন। আধার, ভোটার কার্ডে কাজ হয়নি। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট আনিয়েও ছাড় পাননি। ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে টিনে ঘেরা ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হয়েছিল। খেতে দিত শুধু ভাত। চাইলে সঙ্গে দেওয়া হত ঠাণ্ডা জল। বারবার ক্যাম্প বদল হত। কখনও আবার জুটত সিঙাড়া, পাঁউরুটি। কিন্তু ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই আতঙ্কে খাওয়াদাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য বারবার ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে। শেষে রবিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
বৃহস্পতিবার হাবড়া ১ ব্লক অফিসে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের বৃদ্ধা মা ছায়লা বিবির হাতে রাজ্য সরকারের ২ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দিলেন বারাসতের সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। উপস্থিত ছিলেন বারাসতের মহকুমা শাসক সোমা দাস, বিডিও সুবীর দণ্ডপাট-সহ অন্যান্যরা। কাকলিদেবী বলেন, “শুধু হাবড়া নয়, বিজেপি শাসিত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করছে। এর মাথায় রয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। পরিকল্পিতভাবেই তাঁরা বাংলাকে অপমানিত করাতে শেখাচ্ছে। আমরা মৃত শ্রমিক পরিবারের পাশে আছি। মুখ্যমন্ত্রী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।” মৃত শ্রমিকের মেয়ে মর্জিনা খাতুন বলেন, “মায়ের আগেই মৃত্যু হয়েছে। বাবাকেও তো আর ফিরে পাব না। সংসার চালানো নিয়ে সমস্যায় ছিলাম। রাজ্য সরকারের এই সহযোগিতা আমাদের হিম্মত জুগিয়েছে।”