মায়ের অলঙ্কারে ‘স্বনির্ভর’ হচ্ছে উত্তর! আলিপুরদুয়ারের অভিজিতের তৈরি গয়না যাচ্ছে ভিনরাজ্যেও
প্রতিদিন | ২৯ আগস্ট ২০২৫
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: একসময় মায়ের অলঙ্কারের জন্য গোটা উত্তরবঙ্গের মৃৎশিল্পীদের কলকাতার উপরেই নির্ভর করতে হত। যা একদিকে ছিল অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ, অন্যদিকে সুন্দর অলঙ্কার পেতেও হিমশিম অবস্থা হত উত্তরের পুজো উদ্যোক্তাদের। এসব দেখেই কলকাতার উপরে সেই নির্ভরতা ঘোচাতে চান অভিজিৎ ভৌমিক। তাঁর হাত ধরে মায়ের সাজ এখন তৈরি হয় উত্তরেই। আর তা আলিপুরদুয়ারের শামুকতলায় বসেই তৈরি করছেন অভিজিৎ। তাও আবার কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই।
সেই অভিজিতের হাতে তৈরি সাজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকাতেও। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে ততই চাহিদা বাড়ছে অভিজিতের তৈরি উমার অলঙ্কারের। নির্দিষ্ট কোনও জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর হাতে তৈরি অলঙ্কার শিলিগুড়ি, মালদহ কোচবিহারেও পৌঁছে যাচ্ছে। এমনকী, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন কুমোরটুলিতেও চাহিদা রয়েছে সেই সাজের।
আগে প্রতিমার সাজের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মৃৎশিল্পীরা কলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। পুজোর আগে শহরের বিভিন্ন শিল্পীদের তৈরি সাজ পৌঁছে যেত তাঁদের কাছে। যা অনেক ক্ষেত্রেই খরচসাপেক্ষ। সাজের দাম যত বেশি, তার উপর নির্ভর করে প্রতিমার দামও বাড়ে। আর সেই নির্ভরতা কমাতে নিজেই মায়ের সাজসজ্জা আর অলঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেন অভিজিৎ। গত বছর থেকেই এই কাজ শুরু করেছেন তিনি। বাড়িতে বসে আপাতত একা হাতেই বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সামলাচ্ছেন। সেটাও কোনওরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই।
জানা গিয়েছে, এবার অন্তত ১৯ সেট গয়না তৈরি করতে হচ্ছে তাঁকে। আর সেই গয়না, সাজসজ্জা আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ বহু জায়গায় যাওয়ার কথা আছে। এমনকী, অসম থেকেও অভিজিতের অর্ডার এসেছে। প্রতিবেশী রাজ্যের একাধিক প্রতিমার শরীরে শোভা পাবে অভিজিতের তৈরি অলঙ্কার। অভিজিৎ জানান, ”আমি কোথাও কোনও কাজ শিখিনি। নিজের মন থেকেই এই কাজ করি। ছবি দেখেই প্রথম কাজ শুরু। এবার সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকায় সাজ বিক্রি হয়েছে।” তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না অভিজিৎ। স্বপ্ন দেখেন আরও ভালো কাজ মানুষকে উপহার দেওয়ার। যা মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে।
তবে আক্ষেপ একটাই, আরও বেশি ভালো কাজ করতে চাইলেও মিলছে না দক্ষ শ্রমিক। সেটাই স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিজিৎ। যদিও আগামিদিনে বড় একটি কারখানা তৈরির স্বপ্নও দেখেন তিনি।