আটলান্টিক পেরিয়ে শুল্কের ঢেউ ধাক্কা দিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে, ভয়াবহ বেকারত্বের মুখোমুখি কয়েক হাজার পরিবার...
আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
বিভাস ভট্টাচার্য
ক্ষীণ আশা ছিল শেষপর্যন্ত হয়ত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আগের পদক্ষেপ থেকে পিছিয়ে আসবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। বুধবার ২৭ আগস্ট থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে ভারতের উপর তাঁর চাপানো ৫০ শতাংশ শুল্ক। যা বোমার মতো পড়েছে এদেশের বেশ কয়েকটি শিল্পক্ষেত্রে। এর মধ্যে একটি হল চিংড়ি ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের রপ্তানি। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো এরাজ্যেও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী আছেন যারা নিয়মিতভাবে এই পণ্যগুলি আমেরিকায় রপ্তানি করে আসছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একদম নিচু তলার আরও বহু লোক। যারা এই চিংড়ি ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করে আসছিলেন। কিন্তু বুধবার থেকেই গোটা এই কর্মকাণ্ড এক ভয়াবহ অনিশ্চিয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
কতটা ধাক্কা দিল এই শুল্ক? এই প্রসঙ্গে এরাজ্যের অন্যতম চিংড়ি মাছের 'এক্সপোর্টার' বা রপ্তানিকারী মীর মমরেজ আলি বলেন, 'বিরাট, বিরাট এবং বিরাট।' তিনি বলেন, দুই ২৪ পরগণা ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সংগ্রহ করা হয় এই চিংড়ি মাছ। যা পাড়ি দেয় বিদেশে। এরমধ্যে অধিকাংশ মাছই রপ্তানি করা হয় আমেরিকায়।' অধিকাংশ বলতে ঠিক কতটা? মীর মমরেজ আলি জানিয়েছেন, বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার টন চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ চিংড়ি মাছ যায় আমেরিকায়। বাকি মাছ রপ্তানি করা হয় চিন, জাপান, রাশিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে। আমেরিকার বাজার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, ওখানকার রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি এক একবারে বিরাট পরিমাণ চিংড়ি মাছ ভারত থেকে আমদানি করত। কারণ ওই দেশে চিংড়ির চাহিদা খুবই বেশি।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টি এক ভয়াবহ অনিশ্চিয়তার মুখে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি জানান। তাঁর কথায়, ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের জন্য আমাদের পক্ষে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এই সুযোগটা নেবে সেই সমস্ত দেশ যাদের উপর কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলি।
রপ্তানি বাণিজ্যে এই ধাক্কার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছোট বড় বহু পরিবার। তাঁর কথায়, চিংড়ি উৎপাদনের সঙ্গে বহু পরিবার যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে বাজার হারানোর পর তাঁরাও এক বড় সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে যদি পরিস্থিতি ঠিক না হয় তবে এই পরিবারগুলি শুধুমাত্র বেকার নয়, সংসার চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। ভারত থেকে মূলত প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড চিংড়ি আমেরিকায় বেশি যেত বলে জানা গিয়েছে। সঙ্গে যেত 'র' বা কাঁচা মাল।
চিংড়ি রপ্তানিতে এই ধাক্কার জন্য আনুমানিক কত লোক এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন? রাজ্যের আরেক চিংড়ি রপ্তানিকারী চিন্তামনি মণ্ডল বলেন, 'সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ লোক এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।'
উল্লেখ্য, রাশিয়ার থেকে খনিজ তেল কেনার জন্য ভারতের উপর প্রথমে ২৫ এবং পরে আরও ২৫, মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে আমেরিকাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারত তার দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষার খাতিরেই কাজ করবে। কিন্তু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে এই মুহূর্তে চিংড়ি, বস্ত্র বয়ন শিল্প এবং জুয়েলারি শিল্পে এক বড়সড় ধাক্কা নেমে এসেছে। যার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভবিষ্যত। শুল্ক বৃদ্ধির জন্য বহু আমেরিকান সংস্থাই তাদের অর্ডার বাতিল করে দিচ্ছে বা নতুন করে আর অর্ডার দিচ্ছে না। ফলে কারখানা কারখানায় ধাক্কা খেয়েছে উৎপাদন। বিশেষ করে বস্ত্র বয়ন শিল্প বিশেষত যারা রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের ক্ষেত্রে এই সময়টা যথেষ্টই কঠিন। যদিও ভারত চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করতে। এর জন্য খোঁজ চলছে বিকল্প বাজারের। মীর মমরেজ আলি জানিয়েছেন, তাঁরা আশাবাদী খুব তাড়াতাড়ি ভারতের উদ্যোগে বিকল্প বাজারের সন্ধান তাঁরা পেয়ে যাবেন।