প্রস্তাবিত নতুন জিএসটি-র ধাক্কায় পথে বসতে পারে এই জেলার 'কুটির শিল্প', কর্মহীন হতে পারেন কয়েক লক্ষ বিড়ি শ্রমিক ...
আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত তামাক শিল্পের উপর বর্ধিত জিএসটির ধাক্কায় মুর্শিদাবাদের বিড়ি শিল্প এক ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে দাঁড়াতে চলেছে। কর্মহীন হতে হতে পারেন কেবলমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলায় বিড়ি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় এক লক্ষের বেশি শ্রমিক। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে চলেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
বিড়ি শিল্পের আসন্ন সঙ্কট নিয়ে বুধবার মুর্শিদাবাদ জেলার ঔরঙ্গাবাদে বাম-তৃণমূল এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন এবং বিভিন্ন স্তরের নেতারা একটি কনভেনশনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিড়ি শিল্পপতি তথা জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী, সামশেরগঞ্জের বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি আমিরুল ইসলাম-সহ আরও একাধিক নেতা। সেখানে সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত বিড়ি শিল্পের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি লাগু করার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন।
ঔরঙ্গাবাদ বিড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, 'সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তামাক এবং বিড়ি সিগারেটের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি লাগু করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। আমাদের আশঙ্কা আগামী ৩-৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের পরই বিড়ি শিল্পের উপর প্রায় ৪৩ শতাংশ জিএসটি-র ঘোষণা কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে হতে পারে।' তিনি জানান , 'বিড়ি শিল্পের সঙ্গে কেবলমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমায় ১০ লক্ষ লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। গোটা রাজ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষের কাছাকাছি। জঙ্গিপুর মহকুমায় প্রত্যেকদিন শতাধিক বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কুড়ি কোটির বেশি বিড়ি তৈরি হয়।' তিনি আরও বলেন,' বিড়ির খদ্দের মূলত শ্রমিক শ্রেণী এবং নিম্ন আয়ের লোকেরা। বর্তমানে বিড়ি শিল্পের উপর সর্বাধিক ২৮ শতাংশ জিএসটি লাগু রয়েছে। এরপরে যদি অতিরিক্ত আরও ১২ শতাংশ জিএসটি যুক্ত হয় তাহলে বিড়ি শিল্প চরম সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। '
সূত্রের খবর, কেন্দ্র সরকার নতুন যে জিএসটি আইন চালু করতে চলেছে তাতে বিড়ি শিল্পের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটির সঙ্গে আরও তিন শতাংশ অতিরিক্ত কর যুক্ত হতে চলেছে। তার ফলে বিপুল হারে দাম বাড়তে চলেছে বিড়ির। মুর্শিদাবাদ জেলায় বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাধিক মালিক জানিয়েছেন, তাঁরা আশঙ্কা করছেন বিড়ি শিল্পে নতুন জিএসটি লাগু হলে আগামী দিন মুর্শিদাবাদ জেলায় বিড়ি উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ কমবে। রাজকুমার জৈন বলেন, 'এখন এক হাজার বিড়ি তৈরির জন্য শ্রমিকেরা ২১০ টাকা মজুরি পান এবং সপ্তাহে প্রায় ছ'দিনই তারা কাজ করছেন। কিন্তু নতুন জিএসটি লাগু হয়ে গেলে আমাদের আশঙ্কা বিড়ির চাহিদা গোটা দেশের বাজারে বিপুল হারে কমবে। সে ক্ষেত্রে চাহিদা কমার সঙ্গে আমাদের উৎপাদনও কমাতে হবে। তারফলে শ্রমিকরা ৩ -৪ দিনের বেশি সপ্তাহে কাজ পাবে না। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের মাসিক আয়ে।'
সূত্রের খবর, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার বিড়ি মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার জিএসটি আদায় হয়েছিল। নতুন জিএসটি কাঠামো লাগু হলে সরকারের রাজস্ব আদৌ বাড়বে কিনা সেই বিষয়েও সন্দিহান অনেক বিড়ি কোম্পানির মালিক। বিড়ি শিল্পপতিরা জানিয়েছেন, বর্তমান কর কাঠামোয় বিড়ি পাতার উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি থাকলেও তামাকের উপর সর্বাধিক ২৮ শতাংশ জিএসটি লাগু রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন জিএসটি কাঠামোয় তামাকের উপর জিএসটি-র পরিমাণ ৪০ শতাংশ হতে চলেছে।' মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক বিড়ি মালিক জানিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার তামাক শিল্প এবং বিড়ি শিল্পের উপর নতুন হারে জিএসটি চালু করার কথা ঘোষণার পরেই দেশের বাজারে বিপুল হারে কমতে শুরু করেছে বিড়ির চাহিদা। দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বহু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলার বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো থেকে বিড়ি কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের আইএনটিটিইউসির জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন,' হীরের উপর ৫ শতাংশ জিএসটি রয়েছে অথচ বিড়ি শিল্পের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি বসানোর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে এই শিল্পের সঙ্গে দেশ জুড়ে জড়িত কয়েক কোটি শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা গোটা বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে জানাব।'
মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম বিড়ি শিল্পপতি তথা ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন,' মুর্শিদাবাদ জেলায় বিড়ি একটি কুটির শিল্প। জঙ্গিপুর মহকুমার অন্তর্গত সুতি -সামশেরগঞ্জ -ফরাক্কা সহ একাধিক এলাকায় বেশিরভাগ বাড়িতেই মহিলারা বিড়ি তৈরি করেন এবং এটাই তাদের গ্রাসাচ্ছাদনের একমাত্র রাস্তা। কেন্দ্রীয় সরকার এই লক্ষ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের জন্য বিকল্প কোনও রুটি রুজির ব্যবস্থা না করে একতরফাভাবে জিএসটি বাড়ানোর যে পরিকল্পনা করেছেন তাতে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বিড়ি শিল্প। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। '