জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পাচ্ছেন খড়্গপুরের তনুশ্রী দাস
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
২০২৫ সালে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পাচ্ছেন বাংলার দুই শিক্ষক। তাদের অন্যতম খড়্গপুরের কুচলাচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ তনুশ্রী দাস। আগামী পাঁচ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই সম্মান তনুশ্রী দেবীর হাতে তুলে দেবেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
গত ২৬ বছর ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত তনুশ্রী দেবী খড়গপুর ১ নং ব্লকের গোপালী অঞ্চলের কুচলাচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসে বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রথম যখন এই স্কুলে আসি তখন গ্রামে পড়াশোনার পরিবেশ ছিল না। প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের নিয়ে আমার পথ চলা শুরু। আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল অভিভাবক, গ্রামবাসীদের মানসিক সহযোগিতা প্রতিমুহূর্তে পেয়েছি। আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার পিছনে শুধু আমি নই, আমরা সবাই আছি। আজকে মান্যতা পাওয়ায় ভীষণ ভালো লাগছে।
তনুশ্রী দেবী বলেন, আমি সব সময় মনে করেছি শিশুদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ দরকার । তাই শুধু বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। খুব স্বল্প মূল্যে টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল তৈরি করে বাচ্চাদের শেখানোর কাজে ব্যবহার করেছি। আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা জিনিসপত্র দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। আমার স্কুলের এক একটা দেওয়াল বইয়ের পাতা হয়ে উঠেছে। বিষয় ভিত্তিক এক একটা শ্রেণীকক্ষ। অডিও ভিস্যুয়াল মাধ্যমকেও কাজে লাগিয়েছি।
তনুশ্রী দেবী বলেন, আমাদের শিক্ষকদের ডায়েরি, ক্যালেন্ডার আছে। আমরা পড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিই এবং ডায়েরিতে লিখে রাখি। আগামী দিনে কীভাবে এগোবো তা ক্যালেন্ডারে নথিবদ্ধ করি। এখানে অধিকাংশ বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ নেই । তাই স্কুলেই বাচ্চাদের পড়িয়ে তৈরি করাটা আমাদের লক্ষ্য। গ্রামবাসীদের মানসিক সহযোগিতা, আমাদের প্রতি বিশ্বাস এতটাই যে আমরা এখানে কোনও বাধার মুখে পড়িনি। আমার প্রথম দিকের ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ কেউ এখন কলেজে পড়ছে। কারো সন্তান সন্ততিরা এখন স্কুলের পড়ুয়া।
জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পেয়েছি বলে সব কাজ শেষ হয়ে গেল তা নয়। ১০০ শতাংশ কাজ হয়ে যায়নি। এখনো অনেক পথ চলা, অনেক কাজ বাকি। পুরস্কার পাওয়ায় দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। এর আগেই ২০২০ সালে শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেয়েছি। ২০২২ সালে আমাদের স্কুল নির্মল পুরস্কার পেয়েছে।