• জীবন থাকতে কারও ভোটাধিকার কেড়ে নিতে দেব না: মমতা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • বিধানসভা নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় বাকি থাকতেই ফের সরব হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট জানালেন, ‘জীবন থাকতে কারও ভোটাধিকার কেড়ে নিতে দেব না।’ শুধু বিজেপি নয়, একযোগে তাঁর আক্রমণের নিশানায় এল বাম শিবির ও নির্বাচন কমিশনও।

    মমতার অভিযোগ, এসআইআর বা স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন ইস্যুকে সামনে রেখে বিজেপি সরকার এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এনআরসি করে ভোটার তালিকা থেকে নাম কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু জীবন থাকতে কাউকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’

    তিনি বিজেপি প্রশাসনিক আধিকারিকদের ভয় দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। মমতার বক্তব্য, ‘ডিএম, বিডিওদের ললিপপ দেখানো হচ্ছে, চাকরি খেয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইলেকশন কমিশনের আয়ু তিন মাস, তার পর তারা আর থাকে না। গায়ের জোরে কিছুই হবে না।’

    ছাত্রদের সতর্ক করে মমতা পরামর্শ দেন, ‘নিজের ভোটার লিস্ট একবার দেখে নিন। আধার কার্ড আপডেট করে রাখুন। কারণ ওরা আপনার তথ্য নিয়ে ভোট কেটে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।’

    এদিন শ্রমিকদের দুর্দশার প্রসঙ্গেও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভিনরাজ্যে বাংলার গরিব শ্রমিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি তকমা দিয়ে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। গরিব মানুষের জন্য আমার হৃদয় সবসময় খোলা। আমি জাত-পাত মানি না, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া মেনে নেব না।’

    এদিন মমতার ভাষণে বামেরাও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। কেরলে পাঠ্যপুস্তকে নেতাজি সম্পর্কে ‘ভুল তথ্য’ পড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করে বামেদের রাজনৈতিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে বিঁধে মন্তব্য করেন, ‘ইলেকশন কমিশনের চেয়ারকে আমি সম্মান করি। কিন্তু বড়রা যদি ললিপপ খান, তাহলে তা মানায় না।’

    বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতার মন্তব্য, ‘আমাদের আছে লক্ষ্মীর ভান্ডার, আর ওদের আছে দুর্নীতির ভান্ডার। আমাদের কাছেও ফাইল আছে, দরকার হলে সব প্রকাশ করে দেব।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘মোদীজি সারাক্ষণ দুর্নীতির কথা বলেন, অথচ সারা দেশে যেখানে বিজেপির শাসন, সেখানে দুর্নীতি-সন্ত্রাস আর গুজরাত মডেলই আসল ছবি।’

    অমিত শাহকেও একহাত নেন মমতা। তাঁর কটাক্ষ, ‘আপনি পরিবারতন্ত্রের কথা বলেন, অথচ আপনার ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট! রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ না থাকলেও সর্বত্র আপনাদের পরিবারের দাপট দেখা যায়। মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন, অথচ ললিপপ দেখিয়ে তাদের ভুলিয়ে রাখছেন। আমরা কিন্তু ললিপপ নয়, অধিকার দিই।’

    রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার এই বার্তা শুধু ছাত্রদের উদ্দীপিত করাই নয়, আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য দলের কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর স্পষ্ট কৌশল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)