৭ দিনের মধ্যে অযোগ্যদের তালিকা দিতে হবে, এসএসসিকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে দাগি ও অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের নামের তালিকা সাত দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে, এই মর্মে কমিশনকে স্পষ্ট নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন আদালতের সরাসরি নজরদারির আওতায় রয়েছে। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘প্রয়োজনে আমরা হস্তক্ষেপ করব।’
এদিনের শুনানিতে বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও দাগি অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি কেন? বিচারপতি কুমার জিজ্ঞাসা করেন, ‘জনসমক্ষে তালিকা প্রকাশ করেছেন? না করে থাকলে, কেন করেননি?’ প্রথমে এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু পরে সেই বক্তব্য থেকে সরে এসে আদালতের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। তৎক্ষণাৎ বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মা কড়া সুরে বলেন, ‘একটু আগেই বললেন তালিকা প্রকাশ করেছেন, এখন বলছেন করেননি। এভাবে শীর্ষ আদালতে অবস্থান বদল করলে সেটা বিশ্বাসভঙ্গের শামিল।’
এরপর কমিশনের তরফে সাত দিনের সময় চাওয়া হলে, আদালত তা মঞ্জুর করে। জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা প্রকাশ না হলে মামলাকারীরা ফের আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। বিচারপতি কুমার এদিন ফের স্পষ্ট করে দেন, ‘যোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে আদালতের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু দাগি ও অযোগ্যদের ক্ষেত্রে আদালত নিশ্চুপ থাকবে না।’ এই মামলার সূত্রপাত ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে। সুপ্রিম কোর্ট এর আগে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেয়, যার ফলে চাকরি হারান প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, সঠিক তথ্যের অভাবে যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করে চিহ্নিত করা যায়নি, তাই পুরো প্যানেল বাতিল করতে হয়েছে।
ইতিমধ্যেই নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসএসসি। কিন্তু সেই পরীক্ষায় যোগ্যদের পাশাপাশি রাজ্য অযোগ্যদেরও বসার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে, সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ‘একজনও অযোগ্যকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না। তেমনটা যদি হয়, তার ফল ভুগতে হবে।… ‘এত কিছুর পরেও আপনারা নিজেদের অযোগ্যদের অন্যায় ভাবে নিয়োগ করার চেষ্টা করছেন? এত যোগ্য প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন আপনারা। আপনাদের অন্যায়ের জন্য লোকে আমাদের দিকে আঙুল তুলছে। এটা মানা হবে না।’
আদালতের রায় প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘আগেই এই তালিকা প্রকাশের কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তখনও করা হয়নি, এবারও তৃণমূল সরকার করবে না।’ এদিকে সম্প্রতি কিছু চাকরিহারার তরফে পরীক্ষা স্থগিত রাখার আবেদন করা হলেও, বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানায়, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর এসএলএসটি হবে।