আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাঙা চালে জল পড়ত। পড়ুয়াদের ছাতা মাথায় ক্লাস করার ছবি ভাইরাল হওয়ায় বিতর্ক হয়েছিল। সেই স্কুল এবার স্মার্ট হল। পান্ডুয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে পাঁচপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু হল স্মার্ট ক্লাস রুম।
গত জুন মাসে হুগলির পান্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিনের চাল ফুটো হয়ে বৃষ্টি পড়ছে ক্লাস রুমে, ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক, ছাতা মাথায় পড়ুয়ারা ক্লাস করছে, এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল সমাজ মাধ্যমে। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য, হুগলির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চ্যাটার্জিরা সেই ছবি এক্স হ্যান্ডেলে দিয়ে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন।
বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে ক্লাস করা এখন অতীত। আজ পান্ডুয়ার সেই পাঁচপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উদ্বোধন হল স্মার্ট ক্লাস রুমের। এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৭ জন। শিক্ষক শিক্ষিকা চারজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত গুপ্ত বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে এই স্মার্ট ক্লাস রুম অত্যন্ত সুবিধা দেবে। এখন আর ছবি এঁকে নয়, এল ই ডি স্ক্রিনে ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো যাবে। যা ছাত্রছাত্রীরা অতি সহজেই শিখতে পারবে। রাজস্থানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্মার্ট ক্লাস রুম তৈরি হয়েছে। এদিন এই ক্লাসরুমের ফিতে কেটে শুভ উদ্বোধন করেন ইটাচুনা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সন্তু ফৌজদার। তিনি বলেন, খুব ভাল উদ্যোগ। খুব একটা বেশি স্কুলে এই স্মার্ট ক্লাস চালু হয়নি। এই স্কুলে হয়েছে। বর্তমানে স্মার্ট ক্লাসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আগামী দিনে এই বিদ্যালয়ে যেন আরও উন্নতি করে।
বিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তাঁদের কথায়, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় স্মার্ট ক্লাস রুমের প্রয়োজনীয়তা ভীষণই। যা এই বিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীদের এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে।
দিন কয়েক আগেই ছাতা মাথায় ক্লাস রুমে পড়াচ্ছেন শিক্ষক, ক্লাসরুমে পড়ছে পড়ুয়ারা, তাদের মাথাতেও ছাতা আর ঝমঝম করে বৃষ্টির জল পড়েছে ক্লাস রুমে,পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলের এমন ছবি ভাইরাল হয়েছিল। আর সেই ছবি নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং তার পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ করেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
পান্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলের ৬৮ জন পড়ুয়া। শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির জন্য চারটি ক্লাস রুম আছে।যার মধ্যে দুটি টিনের চালের ঘর। সেই ঘরের চাল নষ্ট হয়ে গেছে। চাল ভেদ করে জল পড়ছে। সেই জলেই ক্লাস করতে হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত গুপ্ত বলেন, '২০২৩ সালে আমি স্কুলে যোগ দিই। তার আগে থেকেই টিনের ঘর দুটির অবস্থা খারাপ। আমি প্রশাসনের সব জায়গায় জানিয়েছি। গতকাল দুটি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।গত বছর ঘর সংস্কারের জন্য এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে।স্কুলে ভাল পড়াশোনা হয়।' গ্রামবাসীরাও জানান, স্কুলের ঘরে শিশুরা ঠিক মতো ক্লাস করতে পারে না।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, 'রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল তা পান্ডুয়ার ওই স্কুল দেখে অনুমান করা যায়। শিক্ষা পরিকাঠামো খাতে যা কেন্দ্র দেয় সব লুটপাট হচ্ছে।' পান্ডুয়ার তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, 'বিজেপির মুখে কথা মানায় না। ওরা যে রাজ্যে আছে এদিকে আগে তাকাক তারপর বাংলার কথা বলবে। স্কুলের বিষটা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ করা হবে।'
পান্ডুয়ার সিপিআইএম প্রাক্তন বিধায়ক স্কুল শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, 'প্রাথমিক স্কুলগুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়নি।আসলেই রাজ্য সরকারের নীতি হচ্ছে বাচ্চাদের থেকে বাচ্চার মা-বাবাকে খুশি করো বেশি। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে চৌপাঠ করা হচ্ছে।'
পান্ডুয়ার বিডিও শ্রেবন্তী বিশ্বাস জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে পাঁচপাড়া স্কুলের জন্য মোট ১১ লক্ষ টাকার এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে। স্কুলে দুটি ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে ব্লক প্রশাসন।