• ‘ক্ষমতা থাকলে বিজেপি ৫০ আসন পার করে দেখাক’, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের...
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবস বৃহস্পতিবার। মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সেই কর্মসূচি চলছে। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সভাপতি মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জি। সভায় উপস্থিত রয়েছেন ছাত্র পরিষদের  সভ্য সমর্থক এবং তৃণমূলের সমর্থকরা। এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেকের মুখে শোনা গেল আরজি কর কাণ্ডের কথা। এর পাশাপাশি তিনি বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর), বিধানসভা নির্বাচন সব কিছু নিয়ে বক্তব্য রাখলেন। একযোগে বিজেপে এবং সিপিএম-কে আক্রমণ করতেও ছাড়লেন না তিনি।

    মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে আরজি কর প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “এক দিনে মমতা ব্যানার্জি পুলিশ যা করে দেখিয়েছে তা সিবিআইও এক বছরে পারেনি। রাজ্যপালের টেবিলে এক বছর ধরে পড়ে রয়েছে অপরাজিতা বিল। সেই বিল পাশ হয়নি। এক বছর আগে যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগের উদ্দেশ্য ছিল গরীব মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছিলেন, সেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া। আজ তাঁরা কোথায়? কেন সিপিএম, বিজেপি কংগ্রেস অপরাজিতা বিল নিয়ে রাস্তায় নামছে?”

    এর পরেই এসআইআর নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, “বিজেপি এসআইআর করে মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। বাংলা ২০২৬ সালে তাদের জবাব দেবে।” তিনি আরও বলেন, “আগে মানুষ ভোটাধিকার বলে সরকার বেছে নিত, এখন সরকার পছন্দ মতো ভোটার বেছে নিচ্ছে। যদি ১০ জনের ভোটাধিকার বিজেপি সরকার কাড়তে চায়, তা হলে তৃণমূল ১০ লক্ষ মানুষ নিয়ে দিল্লির রাজপথ দখল করবে।”

    অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা ১০০ দিনের কার্ডহোল্ডারদের জন্য লড়াই করেছি। তাদের স্বার্থে লড়াই করেছি। আমরা হয়তো দিল্লি থেকে টাকা আনতে পারিনি। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ৬৯ লক্ষ জব কার্ডহোল্ডারের বকেয়া পাওয়া মিটিয়েছেন। আমরা যদি ৬৯ লক্ষের জন্য লড়তে পারি, তা হলে ১০ কোটি বঙ্গবাসীকে যারা বাংলাদেশি বলেছে, তাদের জন্যও লড়াই করব।’’

    তিনি বলেন, “যারা আমাদের বাংলাদেশি বলে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেছে, যারা বলেছে বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই, বলেছে বাঙালি বলে কোনও জাতি নেই, তাদের বিরুদ্ধে ১০ কোটি বঙ্গবাসীর লড়াই করতে হবে।” অভিষেক আরও বলেন,  ‘‘ওরা বিভিন্ন ভাবে বাংলাকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করেছে। বাংলার কৃষকের টাকা আটকে রেখেছে। জল জীবন মিশনের অধীনে ১০ কোটি মানুষের পানীয় জলের প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। ৫০ লক্ষ গরীবের আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে। গ্রামীণ সড়ক যোজনায় ১০ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। তাদের জবাব দেবেন না?’’

    বিচারব্যবস্থার একাংশ প্রতি তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে এবং তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে গিয়ে বাংলরা ছাত্রদের জীবন হাই কোর্টের বিচারব্যবস্থার একাংশ অন্ধকারে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তা রুখেছি।”

    অভিষেক বলেন, ‘‘বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী ভাষায় কথা বলতেন? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কী ভাষা বলতেন? নেতাজি, মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম বসু, জীবনানন্দ দাশ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত— এঁরা কী ভাষায় কথা বলতেন? বিদ্যাসাগর না থাকলে নিজের নাম আর বাবার নামটাও লিখতে পারতেন না!’’  

    অভিষেক বলেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাই পথ দেখিয়েছিল ভারতবর্ষকে। আজ বিজেপি ধমকে, চমকে, চোখ রাঙিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূল কংগ্রেস বিশুদ্ধ লোহা। ওরা যত তাতাবে, আমরা তত শক্তিশালী হব।’’

    সংশোধনী বিল পাশ করানো নিয়েও কেন্দ্রকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “রাতের অন্ধকারে সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। তারা ভেবেছিল ভারতবর্ষটাকে মৌরসিপাট্টা করে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করব। তৃণমূলের ২৮ জন সাংসদের বিক্ষোভে পিছনের সারিতে বসে বিল পাশ করিয়েছেন অমিত শাহ। এটাই তৃণমূলের ক্ষমতা।” তিনি আরও বলেন, “বাংলার মানুষ ২৯টা আসন দিয়েছিলেন বলেই অমিত শাহ আজ চতুর্থ সারিতে বসে বিল পাশ করাচ্ছেন। যদি ৪০টি আসন দিতেন তাহলে অমিত শাহ একদম শেষ সারিতে বসে মুখ লুকিয়ে থাকতেন।”

    অভিষেকের প্রশ্ন, এনআরসির নাম করে ভয় দেখিয়ে বাংলা সহ ভারতবর্ষের সম্প্রীতি নষ্ট করেছে। অনেকে ভয়ে নিজেদের শেষ করে দিয়েছেন। এর জবাব কে দেবে? অভিষেকের হুঁশিয়ারি, “যারা বাংলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের এক ছটাক জমি ২০২৬ তাদের ছাড়ব না।”

    মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, “আপানার ভাঙবেন আমরা গড়ব। বাংলা আপনাদের বশ্যতা স্বীকার করবে না। আপনাদের লক্ষ্য গরিবের চোখে জল নেমে আসুক। আর তৃণমূলের লক্ষ্য, গরিবের মুখে হাসি ফুটুক। দেখি কার জয় হয়। আজ যুদ্ধের দামামা বাজল। আগামী ২৮ আগস্ট মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে চতুর্থ সরকার গঠনের পর এখান থেকেই দামাম বাজাব। সব তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিচারব্যবস্থা, বিজেপি, কেন্দ্রীয় বাহিনী, ইডি, সিবিআই, কমিশন, সংবাদমাধ্যম সবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্ত ১০ কোটি বঙ্গবাসী তৃণমূলের পক্ষে। এসো লড়াৎ করো, কত ক্ষমতা দেখি। আগের বার যা আসন পেয়েছিল তৃণমূল, বুক ঠুকে বলছি তার থেকে আসন বাড়বে তৃণমূলের। কুৎসা যত বেড়েছে তৃণমূল তত বেশি আসন পেয়েছে। ২০১১-য় ১৮৪, ২০১৬-য় ২১১, ২০২১-য় ২১৫। বিজেপির ক্ষমতা থাকলে এ বার ৫০ পার করে দেখাক। আমরা ভেঙে দাওয়া গুঁড়িয়ে দাও রাজনীতি করি না। আমরা যে ভাবে মানুষের পাশে ছিলাম। একই ভাবে থাকব।“

    ‘প্রয়োজনে দেব মোরা এক নদী রক্ত, হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত, অবিরাম লড়াইয়ের চিরসংঘর্ষে, এক দিন সে পাহাড় টলবেই, জনতার সংগ্রাম চলবেই’ এই পংক্তি গেয়ে সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন অভিষেক।
  • Link to this news (আজকাল)