কটক রেলস্টেশনে ছাদ ধসে তীব্র আতঙ্ক, সামান্য আহত ১, বড় দুর্ঘটনা অল্পের জন্য এড়ানো গেল...
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কটক রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার বিকেলে হঠাৎ করেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটের সময় স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নং ১–এ ছাদ ও পুরনো দেয়ালের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ঘটনার সময় সেখানে বহু যাত্রী উপস্থিত ছিলেন, ফলে মুহূর্তের মধ্যে চিৎকার, ধুলো আর ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা প্ল্যাটফর্ম। আতঙ্কে যাত্রীরা ছুটোছুটি শুরু করে দেন। সৌভাগ্যক্রমে বড় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, যদিও একজন সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শোনা যায়। তারপরই টিনের চাল আর কংক্রিটের অংশ ভেঙে পড়ে ধুলোয় ঢেকে যায় চারপাশ। অনেক যাত্রী ভেবেছিলেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। যাত্রীরা ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করলে মুহূর্তের জন্য বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে বয়স্ক এবং ছোটদের মধ্যে আতঙ্ক বেশি দেখা দেয়।
ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে (ECoR) জানিয়েছে, ওই সময় স্টেশনের পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছিল। সেই কাজ চলাকালীন পুরনো একাংশ হঠাৎ ভেঙে পড়ে। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই রেল সুরক্ষা বাহিনী (RPF), Government Railway Police (GRP), ফায়ার সার্ভিস এবং মেডিক্যাল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। দ্রুত ধ্বংসাবশেষ সরানোর জন্য উদ্ধারকাজ শুরু হয় এবং আহত ব্যক্তিকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার জেরে প্ল্যাটফর্ম নং ১ ও ২–এ কিছু সময়ের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। অনেক ট্রেনকে স্টেশনের বাইরে আটকে রাখা হয় এবং যাত্রীদের অন্য প্ল্যাটফর্মে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়লেও নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
রেলওয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “এই ঘটনায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, এটিই আমাদের কাছে স্বস্তির খবর। তবে কেন ছাদ ধসে পড়ল, তার তদন্ত হবে। পুনর্নির্মাণ কাজের সময় যাতে নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পরিষ্কারকাজ দ্রুত শুরু হলেও ধ্বংসাবশেষ সরাতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে সন্ধ্যা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাত ৭টার কিছু পর ভুবনেশ্বর–বালাসোর মেমু ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ১ দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এর মাধ্যমে স্টেশনে পুনরায় ট্রেন পরিষেবা চালু হয়।
যাত্রীদের মধ্যে অবশ্য এখনও আতঙ্কের রেশ রয়ে গেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যদি সেই সময় বেশি ভিড় থাকত বা ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকত, তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হতো। রেলওয়ের আধুনিকীকরণ ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে যে কোনো সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
ঘটনার পর সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় সংগঠনগুলিও রেলের কাছে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন নির্মাণ বা সংস্কারের সময় শুধু পরিকাঠামো উন্নয়ন নয়, যাত্রী সুরক্ষাকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
সব মিলিয়ে কট্ক রেলওয়ে স্টেশনের এই দুর্ঘটনা একটি বড় সতর্কবার্তা। পরিকাঠামো উন্নয়নের সময় সামান্য গাফিলতিই যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা আজকের ঘটনায় প্রমাণিত হল। যদিও গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবুও যাত্রীদের মনে ভয় রয়ে গেছে এবং রেলের প্রতি আস্থা কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়েছে।