প্রাক্তন মন্ত্রী সহ একাধিক প্রভাশালীর বাড়িতে ইডির হানা, মামলা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
নিতাই দে, আগরতলা: একসঙ্গে চার জায়গায় ইডি-র অভিযান। জানা গেছে আর্থিক দুর্নীতি, জমি মাফিয়া ও অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে ত্রিপুরায় একযোগে চারটি স্থানে অভিযান চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান গভীর রাত পর্যন্ত চলে। যেসব স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলি হল, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় খয়েরপুর, কাঞ্চনপল্লী ও ক্যাম্পেরবাজার এবং সিপাহীজলা জেলার নলছড়ে হানা দেয় ইডি আধিকারিকরা। তল্লাশির তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা-সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন খয়েরপুরের উৎপল কুমার চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গেও মামলা রয়েছে। তিনি সিপিআইএম নেতা, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন মন্ত্রী পবিত্র করের ভাগ্নে এবং সিপাহীজলার পশ্চিম নলছড়ের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা হারাধন বৈদ্যের জামাতা। ইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক অপরাধ এবং জমি দুর্নীতির অভিযোগে এই তল্লাশি। যদিও অভিযান সম্পর্কে ইডির পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, ইডি আগরতলার বাধারঘাটের পরিতোষ ভৌমিকের ভাড়াটিয়া মিহির দেবনাথের বাড়ি, এডি নগরের অবসরপ্রাপ্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী স্বরূপ বণিকের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে। উল্লেখ্য, স্বরূপ বণিকের ভাই সোমেশ বণিক বর্তমানে টিসিএস অফিসার হিসেবে বিশালগড় মহকুমা শাসক দফতরে কর্মরত। তবে এই অভিযানের সময় ইডি-র আধিকারিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর সিআরপিএফ জওয়ানরা। একসঙ্গে একাধিক জায়গায় হানায় রাজ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কী কারণে একই দিনে এতগুলো স্থানে অভিযান চালানো হলো, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। ইডি সূত্রে খবর, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল অবৈধ সম্পদের সন্ধান করা এবং তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিকে ফ্রিজ করা। ইডির আধিকারিকরা কী কী উদ্ধার বা বাজেয়াপ্ত করেছেন তার বিস্তারিত তথ্য এখনও জানানো হয়নি। তবে ইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, যে সমস্ত বাড়িতে ইডি টিম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়ের জ্ঞাত উৎসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে। আরও অভিযান চালানোর জন্য ইডি আগামী কয়েকদিন এখানে ক্যাম্প করার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি পশ্চিম ত্রিপুরা এবং সিপাহিজলা জেলার বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে আগরতলা এবং মেলাঘর পৌরসভা, কালামচৌড়া গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে ধারাবাহিক অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় সংস্থা সেই সময়ে অভিযানের ফলাফল প্রকাশ করেনি। তবে, সূত্র জানিয়েছে যে যাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল তাঁদের মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ ছিল।
ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের দুই মাস আগে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, ইডি মাদক পাচার মামলার তদন্তের অংশ হিসাবে পশ্চিম ত্রিপুরা এবং সিপাহিজলা জেলার পৃথক এলাকায় অভিযান চালায়, যেখানে ২ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক আমানত সম্পর্কিত নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
সুজিত সরকার, বিজয় পাল এবং পরেশ চন্দ্র রায়ের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে "এনডিপিএস আইনের অধীনে নিষিদ্ধ (নির্ধারিত বাণিজ্যিক পরিমাণের বাইরে) গাঁজা সংরক্ষণ, পাচার এবং বিক্রয়ে সক্রিয় জড়িত থাকার" অভিযোগে চার্জশিটও দাখিল করা হয়েছিল।