• দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটা দেওয়াল, তলিয়ে গেল মানালির নামি রেস্তোরাঁ, হড়পা বানে বিধ্বস্ত উত্তর ভারত
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশে সম্প্রতি টানা ভারী বৃষ্টিপাত। এহেন অত্যাধিক বর্ষণের ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে। খবকদ অনুযায়ী, ঘটনার জেরে মানালির বিখ্যাত রেস্তোরাঁ শের-ই-পাঞ্জাব প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধুমাত্র সামনের প্রবেশপথটি অক্ষত রয়েছে। জানা গিয়েছে, রেস্তোরাঁটি বিয়াস নদীর খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এটি অতিবর্ষণের ফলে বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। একটি ভিডিও কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় রেস্তোরাঁর সামনের দিকটি ছাড়া বাকিটা ভেঙে নদীতে তলিয়ে গিয়েছে।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, শের-ই-পাঞ্জাব রেস্তোরাঁটি তার খাঁটি উত্তর ভারতীয় খাবারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এমনকী বলিউডের বিভিন্ন তারকা, ক্রীড়াবিদ এবং সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা নিয়মিত এখানে যেতেন। মানালিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য এটি এক আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল।

    স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মানালি, মান্ডি, শিমলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানালি-লে হাইওয়ের একাধিক জায়গা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্যার জলে ইতিমধ্যে একটি বহুতল হোটেল এবং চারটি দোকান ভেসে গিয়েছে।

    খবর অনুযায়ী, মান্ডি জেলার বালিচৌকি এলাকায় সোমবার রাতে দুটি ভবন সম্পূর্ণ ধসে গিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০টি দোকান ছিল,  যা ধসে পড়েছে। তবে আগেই ভবন খালি করে দেওয়া হয়েছিল বলে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। অতিবৃষ্টির কারণে রাজ্যের একাধিক জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    অন্যদিকে সিমলায় টানা বৃষ্টিতে ভূমিধস ও গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর কাংরা, চাম্বা এবং লাহৌল ও স্পিতি জেলায় প্রবল থেকে অতি প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে ‘রেড’ এলার্ট এবং উনা, হামিরপুর, বিলাসপুর, সোলান, মান্ডি ও কুল্লু জেলা এবং শিমলা শহরের জন্য ‘অরেঞ্জ’ এলার্ট জারি করেছে।

    এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর না মিললেও, সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

    প্রসঙ্গত, মাণ্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। মোট ২০১টি রাস্তা, যার মধ্যে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম এনএইচ-০৩ (NH-03) রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুল্লু জেলা, যেখানে ভূমিধসের কারণে ৬৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই জেলায় এনএইচ-৩০৫ (NH-305)-এর খানাগ এলাকাতেও রাস্তা বন্ধ রয়েছে। কিন্নোর জেলা থেকেও এনএইচ-০৫ (NH-05)-এর টিনকু নাল্লা অংশে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

    দুর্যোগের জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মাণ্ডি জেলায়। খবর পাওয়া গিয়েছে, সেখানে প্রায় ৪৪৮টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে লাহৌল-স্পিতি জেলায়। সেখানে উচ্চ ভোল্টেজ লাইনের ত্রুটির কারণে ১১২টি ট্রান্সফর্মার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কুল্লু ও মাণ্ডি জেলায় পানীয় জলের প্রকল্পগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে অনেক প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।

    অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সিরমৌর জেলার রাজগড়ে ৭২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাদ্রালা (৪২.৪ মিমি), পাছাদ (৩৮ মিমি), মান্ডি (২৬.৪ মিমি), ভুন্টার (২২ মিমি), শিলারু (১৪.২ মিমি), সেওবাগ (১২.২ মিমি), শিমলা (১১.৫ মিমি) এবং রোহরু (১০ মিমি)।

    ৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)