• হিসাব না দিলে পুজোর অনুদান নয়, স্পষ্ট বার্তা কলকাতা হাই কোর্টের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • দুর্গাপুজোর অনুদান বিতরণে স্বচ্ছতা আনতে কঠোর অবস্থান নিল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিল, যেসব পুজো কমিটি সরকারি অনুদানের খরচের হিসাব দেয়নি, তারা আর কোনওভাবেই অনুদান পাবে না। আদালতের ভাষায়, ‘যারা নিয়ম মেনেছে, তাদেরই অনুদান দেওয়া হবে, অন্যদের জন্য দরজা বন্ধ।’

    আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, অনুদান পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে পুজো কমিটিকে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হবে রাজ্যের কাছে। আদালত জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হিসাব না দেওয়া মানে সরকারি অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতার শর্ত ভঙ্গ করা।

    রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়ে জানান, ৪১,৭৯৯টি ক্লাবের মধ্যে মাত্র তিনটি ক্লাবই হিসাব দেয়নি, যেগুলি শিলিগুড়ির। এই তথ্য শোনার পর বিচারপতি পালের কটাক্ষ, ‘সংখ্যাটা এতই কম যে দেখতে মাইক্রোস্কোপ লাগবে।’

    তবে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বহু ক্লাবই হিসাব দেয়নি, অথচ সরকার পরে তাদের অনুদান দিয়েছে। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তথ্য চাইলেও প্রথমে কোনও সাড়া মেলেনি বলেও অভিযোগ তাঁর।

    আদালত জানিয়ে দিয়েছে, পূর্বের নির্দেশ মেনে না চলা কোনও কমিটি এ বছর কিংবা ভবিষ্যতে অনুদান পাবে না। আদালতের প্রশ্নে রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দেশ অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা হবে।

    প্রসঙ্গত, সরকারি অনুদানের টাকার স্বচ্ছ ব্যবহারে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল। জনস্বার্থ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, জনগণের টাকা সঠিক কাজে না লাগিয়ে অযথা বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে পুজো কমিটিগুলিকে। রাজ্যের যুক্তি ছিল, অনুদানের অর্থ সচেতনতামূলক প্রচার, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ উদ্যোগ এবং কোভিড পরিস্থিতির মতো বিশেষ সময়ে মানুষের কল্যাণেই ব্যবহার করা হয়েছে।

    হাই কোর্টের এই নির্দেশে স্বচ্ছতার বার্তা স্পষ্ট হলেও, পুজো কমিটিগুলির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ একে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সঠিক পদক্ষেপ বলছেন, কেউ আবার মনে করছেন, এতে প্রশাসনিক ঝামেলা বাড়বে এবং ছোট পুজো কমিটিগুলির জন্য পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)