বড়ঞার বিধায়ক তৃণমূলের জীবনকৃষ্ণ সাহাকে যাঁরা চাকরি পেতে টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি, তাঁদের অনেকেরই এখন মাথায় হাত।
‘‘নিজেই জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিছু টাকা দিয়েছিলাম। চাকরি দিতে পারেননি। কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু এ বার আবার গ্রেফতার হলেন। বাকি টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না!”, আশঙ্কা এক যুবতীর গলায়। তাঁর বাড়ি কান্দি থানা এলাকায়। বিবাহিত। চাষি পরিবারের মেয়েটির কাকা পঞ্চায়েত স্তরে শাসক দলের কর্মী। সে সুবাদে আলাপ দলের বিধায়কের সঙ্গে।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের পরে, সোমবার জীবনকৃষ্ণকে তাঁর মুর্শিদাবাদের বড়ঞার আন্দির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে ইডি। সোমবার সিবিআই আদালতের বিচারক তাঁকে ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সে সুবাদে কারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তাঁদের এখন কী হবে, উঠছে প্রশ্ন।
এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, জীবনকৃষ্ণের হয়ে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন খড়গ্রাম এলাকার এক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘দশ জন চাকরিপ্রার্থী জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে পারলেই মোটা টাকা পাওয়া যেত।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আমার মাধ্যমে যাঁদের চাকরি হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এমন অনেক শিক্ষক আছেন, আদালতের রায়ে যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁদের কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। সে টাকা এখন কোথায় পাব!’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের ছবি দেখিয়ে বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “এটা ১২ অগস্টের ছবি। জীবনকৃষ্ণ মাল তুলেছেন। কিছুটা নিজের কাছে রেখেছেন। আসল মালটা কোথায় গিয়েছে, এই ছবি বলে দিচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “রাজ্যে ভাইপোর টাকা তোলার হাজার লোক রয়েছেন। জীবনকৃষ্ণ ভাগ পেয়েছেন মাত্র।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় বৈঠক করেছিলেন। সেখানে বিধায়ক হিসেবে জীবনকৃষ্ণ উপস্থিত ছিলেন। এটার ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘শুভেন্দু তো তৃণমূলে এতগুলো জেলার দায়িত্বে ছিলেন। উনি এত দিন কিছু বলেননি কেন!”
জীবনকৃষ্ণের বাড়ির চারপাশ এ দিন শুনশান ছিল। ২০২৩ সালে সিবিআই তাঁকে গ্রেফতারের পরে, বাড়ি ঘিরে অনুগামীদের ভিড় দেখা গেলেও, এ দিন তেমন কিছু চোখে পড়েনি। বিধায়কের স্ত্রী টগর সাহা কলকাতায়। তাঁর মোবাইল দিনভর বন্ধ ছিল।
তবে আগের বারের মতো এ বারেও জীবনকৃষ্ণের বাবা বিশ্বনাথ সাহা ছেলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার বীরভূমের সাঁইথিয়ায় বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘ওর জেল হওয়াই দরকার!’’ সেই সঙ্গে নিজের বোন সাঁইথিয়ায় তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি মায়া সাহার সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের যোগসাজশের অভিযোগও তুলেছেন বিশ্বনাথ। মায়ার বাড়িতে সোমবার ইডি গিয়েছিল। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে মায়া বলেন, ‘‘ইডি বেআইনি কিছু পায়নি। আধিকারিকেরা আরও কিছু কাগজ চেয়েছেন। সেগুলো নিয়ে ২৮ অগস্ট কলকাতা যাব।’’ আবার জীবনকৃষ্ণের মা বেলারানি সাহার অভিযোগ, ‘‘জীবনকৃষ্ণের বাবাই এ সব করাচ্ছে।’’ বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা।”