• রোগ রুখতে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, চাই প্রচারও
    আনন্দবাজার | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • মৃদুলা চট্টোপাধ্যায়

    এই সময়ে বিশেষ করে বর্ষার শেষ দিকে নানা অসুখ ছড়ায়। তার মধ্যে মশাবাহিত রোগ অন্যতম। যেগুলির মধ্যে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ সংক্রমণ রয়েছে। ফি বছর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই ধরনের রোগ সংক্রমণ ছড়ায়। কোথাও কম, কোথাও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তা প্রাণঘাতীও হয়ে ওঠে। তাই সব ক্ষেত্রেই সাবধান হওয়া জরুরি।

    এ বছর আরও একটি রোগ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় বেড়েছে। সেটি হল লেপটোস্পাইরোসিস। লেপটোস্পাইরা সংক্রমণে এই রোগ হয়। বিশেষ করে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকে এই রোগ সংক্রমণ মারাত্মক ছড়িয়েছে। দার্জিলিং জেলায় বিশেষ করে, শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় তা নজরে আসছে। বাচ্চা থেকে বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগ ‘জুনটিক’। অর্থাৎ জীবজন্তু থেকে ছড়ায়। সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান কারণ ইঁদুর। বিশেষ করে মেঠো ইঁদুর। ইঁদুরের মূত্র থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায়। বর্ষার জলে তা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। মাঠঘাটে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের শরীর ওই জলের সংস্পর্শে এলে, শরীরে কাটা ছেঁড়া, ফোঁড়া থাকলে সেই ব্যক্তি সহজে আক্রান্ত হতে পারেন। ইঁদুর থেকে গৃহপালিত পশু গরু, মোষ, ছাগল, কুকুর, বেড়ালে সংক্রমণ ছড়ায়। তাদের থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে।

    এই রোগ সংক্রমণ নিয়ে তাই সচেতনতা প্রচার জরুরি। যে কোনও রোগ সংক্রমণ নিয়ে সচেতনতার অভাব একটা বড় সমস্যা। অথচ বিষয়টি জানা থাকলে, সেই মতো সাবধানতা অবলম্বণ করলে, আমরা সংক্রমণ অনেক সহজে এড়াতে পারি। আবার না জানা থাকায় অনেক সময় ভুল ধারণাও হয়। যেমন মুরগি থেকে লেপটোস্পাইরোসিস রোগ সাধারণত ছড়ায় না। অনেকে এ সময় মুরগির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন, ভয় পেয়ে। সেটা ঠিক নয়। মুরগির মাধ্যমে এই সংক্রমণ কিন্তু ছড়ায় না। তাই মুরগির মাংস খাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ আছে বলে মনে হয় না।

    রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পরিচ্ছন্নতার দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগে জ্বর, বমি শুরু হয়। সঙ্গে জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দেয়। চোখ হলদে হয়ে যায়। দ্রুত রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করালে সেরে যায়। ওষুধও রয়েছে। তাই চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু অবহেলা করলে, চিকিৎসা করাতে উদাসীন থাকলে বিপত্তি হতে পারে। প্রাণ সংশয় হতে পারে।

    আরও একটি রোগ এ বার বেড়েছে, হেপাটাইটিস-এ। বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। জলবাহিত হয়ে সংক্রমণ ঘটে। এই রোগটি ‘ফিকো ওরাল’। মল থেকে ছড়ায়। হেপাটাইটিস-বি আগে বেশি হত। এখন সদ্যোজাতদের টিকা দেওয়ায় এই রোগ কমেছে। তবে হেপাটাইটিস-এ সংক্রমণ ঘটছে। জ্বর, বমি জন্ডিস হলে পরীক্ষা করতে পাঠালে অনেকেরই হেপাটাইটিস-এ সংক্রমণ রয়েছে বলে ধরা পড়ছে। এ ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা জরুরি।

    ডেঙ্গি সংক্রমণের জন্য এ সময় বাড়তি সতর্ক হতে হবে। পুজোর আগে থেকে পুজোর সময় দেখা যায় ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ে। বৃষ্টির জন্য জল জমে থাকলে সে সব মশার আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে। এমনিতে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ভাইরাল জ্বর এই সময় বেশি হয়। জ্বরের মতো উপসর্গ বা অসুস্থতা হলে অনেক সময় দেখা যায় নিজেদের মতো ওষুধ খেতে। যা একেবারেই ঠিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

    শিশু বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল
  • Link to this news (আনন্দবাজার)