• কার্যকর আজ, ট্রাম্পের শুল্কের আশঙ্কায় ধস ভারতের বাজারে
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: অনড় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত সম্পর্কে নরম হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখালেন না। পূর্ব ঘোষণা মতোই মঙ্গলবার মধ্য‌রাত থেকে আরোপ হয়ে গেল ভারতের পণ্য রপ্তানির উপর ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের বাড়তি বোঝা। আর তার আগেই আতঙ্ক চেপে বসল ভারতের তামাম বাজারের উপর। মঙ্গলবার মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ২৭ আগস্ট থেকেই যথারীতি ভারতীয় পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক আরোপ করা হল। এমনকী এই বিজ্ঞপ্তিতে আভাস দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে শুল্ক। এই বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ট্রাম্প পিছু হটছেন না। বিশ্বের দু’টি দেশের উপর এই বিপুল আমদানি শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি, ভারত ও ব্রাজিল। আর এই বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা তীব্র হয় যে, ভারতের রপ্তানি-বাণিজ্যের প্রায় ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার লোকসান হতে পারে। আর তা সামাল দেওয়া কঠিন। এই আশঙ্কারই প্রথম অভিঘাত শেয়ার বাজারে। এদিন সাড়ে ৮০০ পয়েন্ট নেমে যায় সেনসেক্স। টাকার পতন ঘটে ডলারের বিনিময় মূল্যে। মিউচুয়াল ফান্ড ও এসআইপি প্রত্যাহারে যেন জোয়ার আসে। কারণ ভবিষ্যতে শেয়ার বাজারে আরও বড়সড় এবং লাগাতার ধসের দুঃস্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। তাই অধিক লোকসানের আশঙ্কায় লগ্নিকারীরা বন্ধ করে দিচ্ছেন এসআইপিও।

    ভারতের অপরাধ কী?

    রাশিয়ার থেকে অশোধিত তেল ক্রয়। ট্রাম্প প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন ভারতকে নত করা যাচ্ছে না, তখন ক্ষিপ্ত হয়ে অতিরিক্ত জরিমানা হিসেবে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের আঘাত হেনেছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুরু করা এই শুল্কযুদ্ধে সবথেকে বেশি ক্ষতি হবে ভারতের টেক্সটাইল, রেডিমেড গার্মেন্টস এবং জুয়েলারি শিল্পের। কারণ, গোটা বিশ্বে ভারত এই পণ্যগুলি যতটা রপ্তানি করে, তার ৩৫ শতাংশই আমেরিকায়। ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের রপ্তানি শুধু তিন সেক্টরেই। কতটা আতঙ্ক গ্রাস করছে? ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানা‌ইজেশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, সুরাত, তিরুপুর এবং নয়ডার টেক্সটাইল ইউনিটগুলি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ৬০ শতাংশ পণ্যের অর্ডার কমে গিয়েছে আমেরিকা থেকে। পরবর্তী ধাক্কা আসতে চলেছে ‘সি ফুড’ জাতীয় পণ্যে, যার ৪০ শতাংশই যায় আমেরিকায়।

    ঠিক এই আবহে এশিয়ার ২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে শুরু হচ্ছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলন। আর সেই ২০ দেশের মধ্যমণি তিনজন—নরেন্দ্র মোদি, জি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার রাশিয়া এবং চীনের সংবাদমাধ্যম আভাস দিয়েছে, এই সম্মেলনে বৈঠক হবে মোদি, পুতিন এবং জিনপিংয়ের। যে বৈঠকের প্রধান এজেন্ডাই হবে ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ তথা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মোকাবিলা। শুরু হচ্ছে নতুন বিশ্বের ক্ষমতার রসায়নের এক লড়াইও। প্রথম যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে চীনে। পশ্চিম বনাম এশিয়া, নতুন পৃথিবীর নতুন সমীকরণ! বাণিজ্য যুদ্ধ দিয়ে শুরু। শেষ কোথায়?
  • Link to this news (বর্তমান)