• একদা শিক্ষক নেতাদের ঢল নামত নিমট্যাঁড়ে, রাতারাতি বিখ্যাত প্রসন্নর শ্বশুরবাড়ি
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ইডি-র তল্লাশি অভিযানের পর থেকে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের অন্যতম ‘মিডিলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের শ্বশুরবাড়ি। পুরুলিয়ার শহরের নিমট্যাঁড়ে অবস্থিত প্রসন্নের শ্বশুরবাড়িটি এখন যেন দর্শনীয় স্থান! সুযোগ পেলেই একবার করে বাড়ির পাশ দিয়ে ঘুরে যাচ্ছেন কৌতূহলী অনেকেই! কেউ বাড়িটি চিনতে না পারলে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করছেন। ওই বাড়িতে ইডি আগমনের খবরে এখন তোলপাড় শহর। সেলুন, চায়ের দোকান থেকে ভাতের হোটেল-সর্বত্রই চর্চা চলছে।

    সোমবার সাতসকালে প্রসন্নের পুরুলিয়ার শ্বশুরবাড়িতে হানা দেন ইডির আধিকারিকরা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সাল নাগাদ ওই বাড়ির মেজ মেয়ে নীলিমার সঙ্গে প্রসন্নের বিয়ে হয়। যদিও দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ আরও আগে থেকেই ছিল। পরিবার সূত্রের খবর, নীলিমারা তিন বোন, এক ভাই। নীলিমা ও তাঁর দুই বোন প্রাথমিকের শিক্ষক। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, তিনজনের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেই প্রসন্নের ‘হাত’ রয়েছে। সোমবারের প্রসন্নের বিধবা শাশুড়ি, শ্যালক শুভম মঙ্গল, ছোট শ্যালিকা অনিমা এবং অনিমার স্বামীকে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। ইডি সূত্রের খবর, বাকিরা অনেক কিছু ‘চেপে’ গেলেও প্রসন্নের শ্যালক শুভম ইডিকে সবকিছুই খুলে বলেন। শুভমের ব্যবহারে ব্যাপক সন্তুষ্ট হন ইডির আধিকারিকরা। শুভমও বলেন, আমি এসবের সম্পূর্ণ বিপক্ষে। আমার মনে হয়েছে আমাদের মতো বর্তমান প্রজন্মের যুবকদের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত। তাই আমি যা জানতাম, তা যথাসম্ভব বলেছি।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় শ্বশুরবাড়িতে মাঝেমধ্যেই আসতেন প্রসন্ন। ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল পুরুলিয়া জেলার শিক্ষক নেতাদের। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের এক পদাধিকারীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শিক্ষক নেতা ওই বাড়িতে প্রায়শই আসতেন বলে খবর। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গলির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত বড় বড় গাড়ি। রাত হলে সেইসব গাড়ি এলাকা থেকে বের হতো। তখন অবশ্য স্থানীয়রা এত কিছু বুঝতে পারেননি। যেহেতু প্রসন্ন বাড়ির জামাই, পরিবারের এতজন শিক্ষক, তাই সেইভাবে সন্দেহ হয়নি। কিন্তু, ২০২২ সালে প্রসন্ন নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তার হতেই আর কিছু বুঝতে বাকি থাকেনি বাসিন্দাদের। 

    তারপর থেকে প্রহর গোনা শুরু হয় বাসিন্দাদের। সোমবার ওই বাড়িতে ইডির হানার পর বাসিন্দাদের অনেকেই বলছিলেন, আমরা তো এই দিনটারই অপেক্ষায় ছিলাম। ভাবছিলাম, সিবিআই, ইডি কবে আসবে! ইডির তো আরও তাড়াতাড়ি আসা উচিত ছিল। এনিয়ে বিজেপির জেলা নেতা গৌতম রায় বলেন, ওই বাড়ি থেকেই চাকরি বিক্রির চক্র চলত। প্রসন্ন রায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের বহু নেতা, শিক্ষক নেতা, বিধায়ক সবাই মিলে এই চক্র চালাত। চাকরি দেওয়ার নাম করে তারা বহু টাকা তুলেছে। বহু মানুষকে ঠকিয়েছে। আশা করছি, এবার দোষীরা শাস্তি পাবে। 

    সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে প্রসন্নের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তে নেমে প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় ২৬ কোটি টাকার খোঁজ পায় ইডি। প্রসন্ন অবশ্য দাবি করেন, এই সম্পূর্ণ টাকা কৃষিকাজের সূত্রে তিনি আয় করেছেন। যদিও এই টাকা যে ঘুষের টাকা, পরবর্তীতে তা উঠে আসে 

    তদন্তে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)