• ঝাড়খণ্ডে পাকাবাড়ি ছেড়ে চলে আসা চার খুদের জীবন বদলে দিয়েছে ‘ঠিকানা’
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: কেউ বাড়ির ঠিকানা হারিয়ে ফুটপাতকেই আস্তানা বানিয়েছিলেন। আবার কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শহরের রাস্তার আস্তাকুঁড়েতে খাবারের সন্ধান করতেন। যাঁদের বলা হয় ভবঘুরে। বর্তমানে তাঁদের হয়েছে কাটোয়া পুরসভার তৈরি ‘ঠিকানায়’। সেখানে  ভবঘুরেদের সঙ্গেই বেড়ে উঠছে ঝাড়খণ্ডের পাকাবাড়ি ছেড়ে চলে মায়ের সঙ্গে চলে আসা মুন্নি, প্রভুর মতো খুদেরাও। তাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে কাটোয়া পুরসভা। 

    প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে রাজ্য সরকারের অর্থানুকূল্যে কাটোয়া পুরসভা ভবঘুরেদের জন্য একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করে। প্রথম দিকে ভবঘুরেদের জীবনের দায়-দায়িত্ব রাজ্য সরকার ও পুরসভার যৌথ খরচে চলছিল। সেখানে তিন বেলা খাওয়ানো হয়। কিন্তু, মাঝে সমস্ত ব্যয়ভার পুরসভাকেই  টানতে হয়েছিল।  প্রথমদিকে ৩৬ জন ভবঘুরেকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল। এখন সেখানে ৪০ জন আবাসিক রয়েছেন। এরমধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে গিয়েছেন। এখন এই ‘ঠিকানার’ ছ’বছর পূর্ণ হল। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে কেক কাটেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমরা চাই, এখান থেকে ছোট শিশুরা মানুষের মতো মানুষ হোক। 

    বাবা খোঁজ রাখে না। মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের ছেলে প্রভু হেমব্রম অ্যাথেলেটিক্সে ভালো দক্ষতা অর্জন করেছে। অনেকে মেডেল জিতেছে। বড় হয়ে চাকরি করে মাকে সুস্থ করে তুলতে চায় সে। প্রভু অনেক ছোটবেলায় মা ও চার ভাইবোনের সঙ্গে ঘর ছেড়েছিল। ঝাড়খণ্ডের পাকাবাড়ি ছেড়ে রেলগাড়িতে চড়ে কয়েক বছর আগে তারা কাটোয়া স্টেশনে চলে এসেছিল।  শহরে এসে নোংরা আবর্জনা থেকেই বোতল কুড়িয়েই তার দিন কাটছিল। এখন প্রভু রোজ স্কুলে যায়। সকাল বিকেল মাঠে খেলতে যায়। অ্যাথেলেটিক্সে প্রশিক্ষণ নেয়। তার জীবনের ছন্দ যেন বদলে গিয়েছে। 

    প্রভু বলে, বড় হয়ে চাকরি করে মাকে নিয়ে আবার ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে  ফিরতে চাই। যেখানে বাবা মাটির মূর্তি তৈরি করত। মা রান্না করত। সেগুলি মনে পড়লে আমার মন কেমন করে। 

    প্রভুরা চার ভাই বোন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে বড়। কাটোয়া ভারতী ভবন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সে এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। আর তার মেজ বোন মুন্নি কাটোয়া কাশেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। আর এক ভাই রাজকরণ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আর  ছোট বোন সন্তোষী  প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। কাটোয়া পুরসভা এই ‘ঠিকানা’ চার ভাই বোনের জীবনটাই বদলে দিয়েছে।  

    কাটোয়া পুরসভার সিটি মিশন ম্যানেজার সৌম্য কোলে  বলেন, ওরা তিন ভাই বোন পড়াশোনায় খুব আগ্রহী। আর প্রভু দৌড়ে পারদর্শী। তাই তাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনার জন্য প্রাইভেট টিউশন সবই দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)