• ভগবানপুরের শিক্ষক ভর্তি পিজিতে, রাতভর অপারেশন পাঞ্জা জুড়লেও সংশয়
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: দীর্ঘ আট ঘণ্টার অপারেশনে শিক্ষকের কেটে পড়া হাতের পাঞ্জা জুড়লেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিসৎসকরা। রাত ৮টায় অপারেশন শুরু হয়। তা শেষ হয় ভোর ৪টা নাগাদ। রাতভর অপারেশনের পর প্রধানশিক্ষক গোকুলচন্দ্র মুড়া আগের মতো নিজের হাতে চক, ডাস্টার ধরতে পারবেন তো? এই প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপারেশন সাকসেসফুল কিনা তার উত্তর পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, ঘটনার ন’ঘণ্টা পর কাটা হাত জোড়া হয়েছে। এটি ছ’ঘণ্টার মধ্যে হওয়াটা জরুরি। সেদিক থেকে অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। তাই অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।

    ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও গ্রেপ্তার হয়নি অভিযুক্ত নন্দ মুড়া। মঙ্গলবার সকাল থেকেই এনিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। হাঁসুয়ার কোপে ডান হাতের পাঞ্জা কেটে পড়া শিক্ষক গোকুলচন্দ্র মুড়া এসইউসি নেতা। তিনি বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। বর্তমানে রাজ্য কমিটির সদস্য। সকালে এসইউসির পক্ষ থেকে অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের দাবিতে ভগবানপুর থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। অন্যদিকে, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিস সুপারের অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। বিকালে ওই সংগঠনের সদস্যরা থানায় বিক্ষোভও দেখান। ভগবানপুর বাজারেও টোটোয় মাইক বেঁধে প্রতিবাদ সভা হয়। সেখানে জখম শিক্ষকের স্ত্রীও ছিলেন।

    মঙ্গলবার সকালে ওই প্রধান শিক্ষকের বড় মেয়ে সম্প্রীতি ভগবানপুর থানায় এফআইআর করেছেন। নন্দ মুড়া ও তার বাবা মহাদেব মুড়ার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। সোমবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ ওই ঘটনার পরই নন্দ পলাতক। পরিস্থিতি বুঝে তার বাবাও বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। পাঞ্জা কেটে নেওয়ার ঘটনায় নন্দকে গ্রেপ্তারের জন্য জোরালো দাবি উঠেছে। 

    গোকুলচন্দ্রবাবু তালদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার ওই স্কুলের একমাত্র সহ শিক্ষক মহেশ্বর গুছাইত বলেন, সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর দিনে এরকম একটি ঘটনায় ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কিত। প্রধান শিক্ষক মিড ডে মিলের সব্জি ও মুদিখানার জিনিসপত্র কিনে আনছিলেন। হামলার পর সেসব রাস্তায় পড়ে যায়। মঙ্গলবারও স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে।

    ভগবানপুর থানার দক্ষিণ কুলবেড়িয়া গ্রামে একটি পুকুরের দু’পাশে গোকুলচন্দ্রবাবু ও হামলায় অভিযুক্ত নন্দর বাড়ি।  ঘটনার পর দুই বাড়িতেই তালা। গোকুলবাবুর পরিবার ভীমেশ্বরীতে শ্বশুরবাড়িতে চলে গিয়েছে। আর পুলিসি ধরপাকড়ের ভয়ে নন্দ ও তার বাবা বেপাত্তা। এদিন থানার ওসি সাহেনশা হক এসইউসি নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন। 

    বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক সৌমিত্র পট্টনায়েক বলেন, জখম শিক্ষক আমাদের সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা সহ নানা সামাজিক কাজে যুক্ত। গলায় হাঁসুয়ার কোপ বসানোর মুহূর্তে হাত দিয়ে আটকানোয় হাতের পাঞ্জা কেটে পড়ে যায়।  অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়নি।

    তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জেন শিবশঙ্কর দে বলেন, কাটা অঙ্গ ছ’ঘণ্টার মধ্যে জোড়া লাগলে সাফল্যের হার বেশি। সময় যত গড়াবে, দুশ্চিন্তার কারণ তত বেশি।

     রক্তাক্ত গোকুলচন্দ্র মুড়া। -ফাইল চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)