• খাবারের দোকানে সন্তান ফেলে বেপাত্তা মা ঘাটালে চাঞ্চল্য, হোমে ঠাঁই অনাথ শিশুর
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: মাত্র দেড় বছরের শিশুপুত্রকে খাবারের দোকানে ফেলে গেলেন এক মহিলা। মঙ্গলবার সাতসকালে ঘাটাল সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের গেটের সামনে এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। এদিন ওই মহিলা হাসপাতালের সামনে এক দোকানদারের কাছে ওই শিশুকে রেখে যান। কিন্তু কয়েকঘণ্টা পরেও তিনি ফিরে না আসায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ওই দোকানের মালকিন গঙ্গাদেবী বিষয়টি পুলিসকে জানান।

    ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিক দুর্লভ সরকার বলেন, এদিন সকালে হাসপাতালের ২নম্বর গেটের সামনে এক মহিলা দোকানদারের কাছে শিশুটিকে রেখে চলে যান। ওই শিশুকে উদ্ধার করে শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

    ঘাটাল-মেচোগ্রাম রাস্তার পাশেই হাসপাতালের গেট রয়েছে। হাসপাতালের ২নম্বর গেটের সামনেই গঙ্গাদেবীর দোকান। তিনি বলেন, এদিন সকাল ৬টা ১০মিনিট নাগাদ চুড়িদার পরা এক মহিলা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আমার দোকানের সামনে আসেন। ওই মহিলা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। আমার চোখে চোখ পড়তেই বলেন, উনি শৌচাগারে যাবেন। আমি যেন বাচ্চাটাকে কিছুক্ষণ দেখে রাখি।

    মাঝেমাঝেই হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয়দের বাচ্চা এভাবে আগলে রাখতে হয়। সেই জন্য গঙ্গাদেবীও বাচ্চাটিকে রাখতে রাজি হয়ে যান। তিনি বলেন, আমি বাচ্চাটাকে দোকানের চেয়ারে বসিয়ে রাখি। একটা বিস্কুটও খেতে দিই। কিন্তু দেড়-দু’ঘণ্টা কেটে গেলেও ওই মহিলা না আসায় আমার সন্দেহ হয়। তখন আশপাশে ও এলাকার সমস্ত শৌচাগারে খুঁজেও ওই মহিলার হদিস পাইনি। তখন ভয় পেয়ে পুলিসে খবর দিই।

    পুলিস এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে  পাঠিয়েছে। ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিক বলেন, এখনও পর্যন্ত শিশুটির বা ওই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি। ওই মহিলা শিশুর মা কি না, তা নিয়েও পুলিস ধন্দে রয়েছে। কেন তিনি শিশুটিকে দোকানে রেখে গেলেন, সেটাও বড় প্রশ্ন। পুলিস পুরো ঘটনার জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে।

    এর আগেও জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ধারে বা হাসপাতালে শিশু ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিশু অধিকার কর্মীরা জানান, আর্থিক অনটন, পারিবারিক অশান্তি বা মানসিক চাপে পড়ে অনেকেই এধরনের চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আবার পাচারকারীদের হাতে পড়েও ওই সমস্ত শিশুর সঙ্গে এমনটা ঘটতে পারে। পুলিস তাড়াতাড়ি ঘটনার তদন্ত করে ওই মহিলাকে খুঁজে বের করুক, এমনটাই চান শিশু অধিকার কর্মীরা।

    এঘটনার পর এলাকার ব্যবসায়ী ও মহিলারা আতঙ্কিত। স্থানীয় মহিলারা জানালেন, ট্রেনে, বাসে, মেলায়, প্রতীক্ষালয়ে মায়েরা অন্য মহিলাকে সাময়িকভাবে বাচ্চার দেখভাল করতে বলেন। ঘাটাল শহরের কুশপাতার বধূ কেয়া মণ্ডল বলেন, আমি নিয়মিত বাসে কলকাতায় যাই। অনেক সময় অন্যের শিশুকে কোলে নিতে হয়। এদিন যে ঘটনা ঘটল, তাতে তো পরিচিত ছাড়া কোনও শিশুর দায়িত্ব নেওয়া যাবে না।
  • Link to this news (বর্তমান)