সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: ‘স্ত্রীকে খুন করে রক্তমাখা হার্ট ও লিভার ব্যাগে ভরে আমাদের বাড়িতে এসেছিল রমেশ। গত ২২ তারিখ ওই ঘটনার পর এখনও আতঙ্ক কাটেনি। চোখ বন্ধ করলেই ওই ছবি ভেসে ওঠে। জলজ্যান্ত মানুষের এভাবে মৃত্যুতে ভূতের ভয় জাঁকিয়ে বসেছে। তাই সোমবার রাতে বাড়িতে হরিনাম কীর্তনের ব্যবস্থা করেছিলাম’। মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন ব্যাঙকান্দির গোপালচন্দ্র রায়। ওই ঘটনার পর ভয়ে অনেকেই রাতে ঘর থেকে একা বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এদিকে, মৃত মহিলার বাড়িতে মঙ্গলবার তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ‘খুনি’ রমেশ রায়ের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ রাস্তায় বাতির ব্যবস্থা করেছে।
প্রসঙ্গত, ২২ আগস্ট হাড়হিম করা সেই ঘটনাটি এলাকার বাসিন্দাদের মনে গেঁথে গিয়েছে। রমেশ রায় তাঁর স্ত্রী দিপালী রায়কে কুপিয়ে খুন করে। শুধু তাই নয়, তার পাগলামি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে স্ত্রীর হার্ট-লিভার কেটে বের করে ওসব প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে ভরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল। এমন ঘটনা চোখে দেখা তো দূরের কথা, কানে শোনেননি প্রান্তিক এই গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের কারও কারও মধ্যে ভূতের ভয় চেপে বসেছে। কেউ কেউ বাড়িতে পুজোর আয়োজন করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রমেশ রায়ের আত্মীয় পরিজনরা তাঁদের বাড়িতে হোমযজ্ঞ করেন।
পুলিস সূত্রেই জানা গিয়েছে, রমেশ ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীকে খুন করে হার্ট ও লিভার বের করে ব্যাগে ভরে বাড়ি থেকে বেশকিছুটা দূরে গোপালচন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। সকাল সকাল রমেশের পোশাকে রক্তের দাগ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন গোপালবাবুর বৃদ্ধ মা। তাঁকে প্রণাম করতেও চেয়েছিল রমেশ। ঘরেও ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু গোপালবাবু বাধা দেন। পরবর্তীতে ক্যারিব্যাগ থেকে রক্তমাখা মাংস পিণ্ড বের করতেই মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল গোপালবাবুর মায়ের।
রমেশ কোনও অঘটন ঘটিয়েছে, আঁচ করতে পেরে পঞ্চায়েত প্রধানকে ফোন করে জানান গোপালবাবু। এরপরই প্রকৃত ঘটনা সামনে আসে। গোপালচন্দ্র রায় বলেন, জলজ্যান্ত একটি মানুষকে খুন করে তাঁর দেহাংশ খুবলে বের করে আমাদের বাড়ি আসে রমেশ। ওই ঘটনার পর আমরা প্রত্যেকেই আতঙ্কিত। বাড়িতে যেন খারাপ কিছু না হয়, তারজন্য কীর্তনের আয়োজন করেছি। এতে মানসিক শান্তি হয়েছে। পাড়ার অনেকেই কীর্তনের আসর তাঁদের বাড়িতে বসাবেন বলে জানিয়েছেন।
পঞ্চায়েত প্রধান নীলিমা রায় বলেন, এতবড় একটি ঘটনা হয়েছে, আতঙ্ক তো থাকবেই সকলের মধ্যে। আমরা গ্রামের রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করেছি। কেউ কেউ ভূতের ভয় পাচ্ছেন। যজ্ঞ, কীর্তন করছেন। আশা করছি, ধীরে ধীরে এই আতঙ্ক কেটে যাবে। নিজস্ব চিত্র।