• টিফিন খরচের টাকা জমিয়েই পুজোর আয়োজন পড়ুয়ার
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • মঙ্গল ঘোষ, পুরাতন মালদহ: স্কুলে টিফিন করার জন্য বাবার কাছ থেকে যেটুকু টাকা পায়, তার কিছুটা জমিয়ে রাখে। তাকে যে প্রতিমা বানিয়ে পুজোর আয়োজন করতেই হবে!

    বছর পাঁচেক বয়স থেকে গাজোলের ময়নার শুভঙ্কর সরকারের মাটির কিছু গড়ার প্রতি ঝোঁক। বাবা-মা অনেক বারণ করলেও মাটি দিয়ে ছোট ছোট শিব, কালী প্রতিমা বানিয়ে লুকিয়ে পুজোর আয়োজন করত। শুভঙ্কর এখন কিশোর। তবে, পড়াশোনার ফাঁকে প্রতিমা তৈরি করা ছাড়েনি। সেদিকেই তাঁর ধ্যান। হতে চায় বড় মৃৎশিল্পী।

    শিক্ষাশ্রী প্রকল্পে কিছু অর্থ শুভঙ্করের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। সেই টাকা ও পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে সে বাড়িতে দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে ষষ্ঠী থেকে দশমী পুজোর আয়োজন করে। নিয়ম মেনে খিচুড়ি, লুচি, পায়েস, ফল ভোগ দেয়। এবার তার পুজোর চতুর্থ বর্ষ। তিন ফুটের প্রতিমা বানিয়ে চলছে তারই আযোজন। সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশীরাও। 

    শুভঙ্করের বাড়ি ময়নার কৃষ্ণপল্লী এলাকায়। ময়না হাইস্কুলের ছাত্রের বাবা সনাতন সরকার, মা রীতা। বাবা দর্জি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শুভঙ্কর ২০২১ সালে একফুটের দুর্গামূর্তি গড়ে পুজো শুরু করেছিল। তারপর একটু একটু করে আকার বাড়ছে। ২০২৪ সালে বাড়ির এক সদস্য  প্রয়াত হওয়ায় পুজো হয়নি। শুভঙ্কর বলে, নিয়ম মেনে বৈষ্ণব মতে পুজো করি। এবার প্রতিমা হবে তিনফুটের। তবে, চালা দিয়ে উচ্চতা দাঁড়াবে পাঁচ ফুটের কাছাকাছি। সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী সহ অন্য দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে। নিজেই পুজো করি।

    বাবার কথায়, ছোট থেকেই মাটির দিকে খুব ঝোঁক ছেলের। অনেক বার বারণ করলেও শোনেনি। মাটি হাত থেকে কেড়ে নিলেই কাঁদত। অনেক সময় না খেয়ে হাত খরচের টাকা আমার কাছে রেখে দেয়। ছেলের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়েছি। 

    তিনি আরও বলেন, পুজোয় অনেক খরচ। স্থানীয়রাও সাহায্য করেন। ছেলে ওর ইচ্ছেমতো ভালো মৃৎশিল্পী হোক, সেটাই চাই।  দুর্গামূর্তি তৈরি করছে শুভঙ্কর সরকার।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)