আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার 'অপরাধ'-এ এক যুবককে সালিশি সভা বসিয়ে শাস্তির বিধান দিল গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের উপরেও চড়াও হন বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী। ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এরপর পুলিশের একটি বড় বাহিনী নিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাটিয়ান গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈজনাথপুর গ্রামের এক যুবক দীর্ঘদিন ধরেই ডাটিয়ান গ্রামের এক যুবতীর প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। এরপর মনস্থির করে তিনি ডাটিয়ান গ্রামে গিয়ে ওই যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বিষয়টি কোনোভাবে জানাজানি হয়ে যায়। ওই এলাকায় একজন দু'জন করে গ্রামবাসী জড়ো হতে থাকেন। যুবককে বলা হয় কেন তিনি ওই গ্রামের যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন? স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ওই যুবক বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি ওই যুবতীকে ভালোবাসেন। তাই সরাসরি তাঁকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। যুবতী যদি রাজি থাকেন তবে তিনি বিয়ে করতেও প্রস্তুত বলে ওই যুবক জানান। কিন্তু অভিযোগ, গ্রামবাসীরা তাঁর কোনো কথাই শুনতে চায়নি। যুবতীকে সরিয়ে দিয়ে তারা ওই যুবককে আটক করে। এরপর গ্রামের নেতৃস্থানীয়রা চলে আসে। বসানো হয় সালিশি সভা। অভিযোগ, সেই সভায় যুবকের কোনও কথার গুরুত্ব না দিয়ে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উপস্থিত নেতৃস্থানীয়রা।
ইতিমধ্যেই খবর ছড়িয়ে যায় আশেপাশে। জোর করে এক যুবককে আটকে রেখে তাঁকে সালিশি সভা বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার তোড়জোড় হচ্ছে শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। তারা এসে গ্রামবাসীদের বিষয়টি বুঝিয়ে যুবককে উদ্ধার করতে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেয়। তাদের বক্তব্য, ওই যুবককে ছাড়া চলবে না। গ্রামের মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার 'অপরাধ'-এ তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে। পুলিশকর্মীরা এরপর ওই যুবককে যখন উদ্ধার করে তাঁদের গাড়িতে তুলছিলেন তখন গাড়ি ঘিরে ধরে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী। ধস্তাধস্তি করে ছিনিয়ে নিতে যায় যুবককে। কিন্তু বাধা দেয় পুলিশ। এই ধস্তাধস্তির সময় কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশকর্মীরা তাঁদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানান। এরপরেই অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী পাঠানো হয় ওই গ্রামে। তাঁরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মনোজিৎ সরকার, দুই সাব-ইনস্পেক্টর শঙ্কর রজক ও নিত্যানন্দ সাহা-সহ আরও বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রামবাসীদের আক্রমণে আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মনোজিৎ সরকার বলেন, 'এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।'
ডাটিয়ান গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা অস্বাভাবিক। গ্রামের সবাই এর সঙ্গে জড়িত নয়। কিছু সংখ্যক মানুষ এই কাজ করেছেন। যারা দোষী তারা শাস্তি পাক। কিন্তু নির্দোষ গ্রামবাসীরা যেন কেউ শাস্তি ভোগ না করেন।' ঘটনার জন্য তৃণমূল ও পুলিশকে একযোগে নিন্দা করেছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে মালতিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও মালদা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, 'মালদা জেলার পুলিশ যে কোনো ধরনের ঘটনায় যথেষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করছে। সঠিক তদন্ত করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিজেপি এখন ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। তাদের মনে রাখা উচিত যারা রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছে তারাও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পুলিশেরই নিরাপত্তা পাচ্ছে। যে ঘটনা ঘটেছে তার যথাযথ তদন্ত হবে।' এখনও ওই এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।