• ভুয়ো সিবিআই, ইডি অফিসার সেজে চালানো হচ্ছিল অফিস! বিরাট প্রতারণাচক্রের পর্দাফাঁস পুলিশের, ধৃত ৫
    প্রতিদিন | ২৬ আগস্ট ২০২৫
  • সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: কখনও ভুয়ো সিবিআই অফিসার, কখনও ইডি অফিসারের মিথ্যে পরিচয়! কখনও বা নারকোটিক ব্যুরো, কখনও আবার ভুয়ো ভিজিলেন্স অফিসার বা সিআইডি অফিসার সাজা! ডায়মন্ড হারবারে অফিস খুলে বসে টাকা তোলার এক বিরাট প্রতারণা চক্র ফাঁস করল ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশ। চক্রের মূল পাণ্ডা-সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

    অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জোনাল) মিতুন কুমার দে জানান, ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ানী কোর্ট পাড়ায় সম্প্রতি রীতিমতো অফিস খুলে বসেছিল ওই প্রতারণাচক্র। এমনকী অফিস উদ্বোধনের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের লোগো লাগানো নীলবাতির গাড়িতে চড়ে সংস্থার অফিস উদ্বোধন করতে এসেছিলেন এক ব্যক্রি। তাঁকে সংস্থার এক অফিসার পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। সোশ্যাল-লিগ্যাল-ক্রাইম অ্যান্ড ইনফরমেশন নামে ‘এসএলসিআই ক্রাইম ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’ সংস্থার এই নাম দিয়ে ওই চক্র অফিসে ব্যানার লাগায়। ব্যানারে সংস্থাটির সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের প্রত্যয়িত করার কথাও উল্লেখ রয়েছে। সংস্থাটি ভারত সরকারের রেজিস্টার্ড ও লাইসেন্স প্রাপ্ত বলেও ব্যানারে উল্লেখ রয়েছে।

    সংস্থাটি যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা ও ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার পদস্থ কর্তার কাজের জন্য তাঁদের ছবি-সহ ভুয়ো শংসাপত্র ছাপিয়েও লোকজনকে দেখিয়ে চমকাত বলে অভিযোগ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় ওই চক্রটি নিজেদের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অফিসার বলে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা তুলছিল। ইতিমধ্যে অনেকেই ওই প্রতারণা চক্রের শিকার হয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

    অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, বারুইপুর থানা এলাকায় ভিজিলেন্স অফিসার পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে এই চক্র প্রতারণা করে। ভুয়ো অফিসার সেজে সাধারণ মানুষকে ধমকে চমকে টাকা তুলত প্রতারণা সংস্থার ওই প্রতারকরা। সংস্থার ব্যানার, লোগো দেখে সন্দেহ হওয়ায় তদন্তে নামে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও সাকিব আহমেদ ও ডায়মন্ডহারবার থানার আইসি অমরজিৎ বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রতারণা চক্রকে ধরতে কোমর বেঁধে নামে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ওই চক্রের পাঁচজনকে। ধৃতরা চক্রের পাণ্ডা কলকাতার লেক থানা এলাকার বাসিন্দা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ফলতার বাসিন্দা সুজাউদ্দিন শেখ, লেক থানার এলাকার বাসিন্দা গোপাল বারিক, সন্দীপ বর্মন, মুস্তাকিন মোল্লা ও কুলতলির বাসিন্দা জামাল হালদার। ধৃতদের আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

    এই প্রতারণা চক্রটি পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছে, তাদের সংস্থার সদর দপ্তর রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। চক্রের সঙ্গে কলকাতা, ডায়মন্ড হারবার এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের আরও কেউ জড়িত কি? এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বিগত দিনে ধরা পড়া প্রতারকদের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি? পুলিশ সেসব বিষয় খতিয়ে দেখছে। প্রতারকদের ভুয়ো পরিচয়পত্র, ব্যাজ-সহ বেশ কিছু ভুয়ো নথিপত্রও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)