• অসমে মৃত্যু কাকদ্বীপের এক পরিযায়ী শ্রমিকের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ আগস্ট ২০২৫
  • অসমে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মৃতের নাম সোমনাথ জানা (২৭)। তাঁর বাড়ি বামানগরের পার্বতীপুর এলাকায়। অসম প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এক ‘বাস দুর্ঘটনায়’ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে এই মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক প্রশ্ন। কারণ, বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ক্রমাগত নিপীড়নের অভিযোগ বহুবার উঠেছে। এমন আবহেই সোমনাথের মৃত্যু নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, সঙ্গে রাজনীতির পারদও চড়ছে।

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ আগস্ট অসম থেকে বাড়ি এসেছিলেন সোমনাথ। কয়েকদিন কাটিয়ে মঙ্গলবার তিনি আবার অসমে কাজে ফেরেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফোন বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পরিবার। অবশেষে রবিবার সকালে অসমের অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁদের জানানো হয়, সোমনাথ একটি বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। এই খবরে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবার।

    সোমনাথ একটি বেসরকারি সংস্থায় সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। অসমের ঠিক কোন এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বা কীভাবে তা ঘটল, সেই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়েই সন্দেহ দানা বেঁধেছে পরিবারের মধ্যে। কারণ, আগেও অসম সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থা, নিগ্রহ এমনকি বাংলাদেশি অপবাদ দিয়ে সেই দেশে পাঠানোর ঘটনাও সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে অসমে গিয়ে সোমনাথের রহস্যমৃত্যু স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলছে।

    ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘অসমে বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা খোঁজ নেওয়া শুরু করেছি। আপাতত বলা হচ্ছে দুর্ঘটনা, তবে আমরা প্রকৃত সত্য জানতে চাই। তদন্তে নামা হয়েছে এবং মৃতের পরিবারকে সবরকমভাবে সহায়তা করা হবে।’

    রাজনৈতিকভাবে এই মৃত্যু আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালিদের প্রতি বৈরিতার অভিযোগ তুলে আসছে। রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের তরফে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই অসমে অনেককে বাংলাদেশি বলে অপদস্থ করা হচ্ছে। ফলে এমন এক আবহে কাকদ্বীপের যুবকের মৃত্যু নতুন করে রাজনৈতিক চাপানউতর সৃষ্টি করতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

    এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে সোমনাথের পরিবার। পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ ইতিমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে, তদন্তের পাশাপাশি শোকাহত পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হবে।
    তবে এই মৃত্যু আদৌ দুর্ঘটনা, নাকি তার আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য কোনও বেদনাদায়ক বাস্তবতা – তা জানতে চায় গোটা বাংলা। প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্তই এখন একমাত্র ভরসা সোমনাথের পরিবারের।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)