ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে বিপর্যস্ত বউবাজারের গৃহহীনদের ঘরে ফেরানোর আশ্বাস মেয়রের, পরের বছর পুজোর আগে শেষ হবে নির্মাণ?
আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
বউবাজারের ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিপর্যয়ের জেরে গৃহহীন হয়ে পড়া পরিবারগুলির জন্য আশার আলো দেখা দিল। ২০২৭ নয়, বরং আগামী ২০২৬ সালের পুজোর আগেই তাঁদের পুনর্বাসনের কাজ শেষ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সোমবার কলকাতা পুরসভার সম্মেলন কক্ষে বউবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতিনিধি, চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে এবং কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল) শীর্ষ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। কেএমআরসিএলের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) একে নন্দী-সহ একাধিক আধিকারিক। বৈঠক শেষে মেয়র জানান, আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে এবং শীঘ্রই কলকাতা পুরসভার সঙ্গে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হবে। এর পরেই পুনর্বাসন প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রকাশ করা হবে।
বৈঠক শেষে মেয়র ফিরহাদ বলেন, “কেএমআরসিএল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই প্রাথমিক কাজ শেষ করে নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।” তিনি আরও বলেন , “এক বছর নয়, আগামী ৯ মাসের মধ্যেই বউবাজারের বাস্তুহারা মানুষেরা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন।” বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য তিন মাস অন্তর রিপোর্ট দেওয়া হবে। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে পূর্ত ও জল সরবরাহ সংক্রান্ত পরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। নতুন ভবন তৈরি হয়ে গেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে আগামী ১০ বছর ধরে সেই বাড়িগুলির গুণগত মান ও স্থায়িত্ব পর্যবেক্ষণ করা হবে।
মেয়র বলেন, “যদি মেট্রো চলাচলের কারণে নতুন করে কোনও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে কেএমআরসিএল।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, আর দেরি না করে মানুষ দ্রুত তাঁদের নিজের বাড়ি ফিরে পান। কলকাতা পুরসভা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো টানেল খননের সময় বউবাজার এলাকায় ব্যাপক ভূমিধস হয়। বহু পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ে এবং শতাধিক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সেই সময় থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ দিন নতুন আশ্বাসে স্বস্তি ফিরল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মুখে। ফিরহাদ জানান, ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে ২৪টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পে দ্রুত কাজের গতি আনার জন্য কেএমআরসিএল ও পুরসভার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পক্ষ থেকেও বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয় যে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এ বার সত্যিই তাঁদের ঘরে ফেরা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী শুক্রবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় তিন মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধন করছিলেন, সেই সময় এই গৃহহীনরা বউবাজারে নিজেদের বাসস্থান ফিরে পাওয়ার দাবিতে বউবাজারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় তাঁদের অবস্থান মঞ্চে গিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেন মেয়র। আর সোমবার তাঁদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেন কলকাতা পুরসভা এবং কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ।