‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদে শামিল হলেও বুথ স্তরে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতারই সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সিপিএম। কোভিড-কালে যেমন ‘রেড ভলান্টিয়ার’ বাহিনী কাজ করেছিল, সেই ধাঁচেই গলের কর্মী-সমর্থকেরা ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ে স্বেছাসেবকের ভূমিকা পালন করবেন বলে ঠিক হয়েছে। সিপিএমের বক্তব্য, বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি প্রকৃত ভোটারের নাম যাতে কোনও ভাবেই বাদ না যায়, সে দিকে নজর রাখাই এই অবস্থানের লক্ষ্য।
নির্বাচন কমিশন এসআইআর প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের (বিএলএ) সঙ্গে রেখেই এগোতে চাইছে। তবে বিহারে বুথ স্তরে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিশনের নিযুক্ত বুথ লেভল অফিসারেরা (বিএলও)। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনায় সর্বোচ্চ আদালতও দলগুলির কাছে ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ চেয়েছে। বিহারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই বাংলায় কমিশনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার বাইরেও দলীয় স্তরে সক্রিয় থাকতে চাইছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘বিহারে বা অসমে কী হয়েছে, আমরা দেখেছি। সব চেয়ে বিপদে প্রান্তিক মানুষ। তাঁদের পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য। কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দিতে দেওয়া যাবে না। যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নাম তুলতে সাহায্য করতে হবে।’’
এসআইআর শুরুর আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি না-হলেও কমিশন ইতিমধ্যে সব দলের কাছে বিএলএ-দের নামের তালিকা চেয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, কোনও জেলা থেকে ৬৫-৭০% বুথ, কোনও জেলার ৫০% বুথের প্রতিনিধিদের তালিকা হয়েছে। অর্থাৎ সব বুথে লোক দেওয়ার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা সিপিএমের নেই। তাই স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় সহায়তাও কত জায়গায় দেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
আলিমু্দ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে সোমবার সেলিম অবশ্য বলেছেন, ‘‘ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করার কথা আমরা সব সময়েই বলি। কিন্তু তা করা হয়নি। এখন এসআইআর-এর নামে সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় ফেলা হচ্ছে! প্রমাণের দায় ভোটারদের পরেই চাপানো হচ্ছে। আমরা ‘রেড ভলান্টিয়ারে’র মতো কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কমিশনের এই চেষ্টার প্রতিবাদের পাশাপাশি হাতে-কলমে মানুষকে সাহায্য করব। যাতে কোনও নাগরিক বঞ্চিত না হন।’’ একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা মুর্শিদাবাদের ভোটের পরে বলেছিলাম, ভোটার তালিকা থেকে গণনায় কারচুপি হয়েছে। এখন হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র সামনে এসেছে। এসআইআর-এর মাধ্যমে প্রান্তিক অংশই সব চেয়ে বিপদে, বিহারে তা প্রমাণিত। এখানে তৃণমূল টাকা খাবে। বিজেপি নিজেদের নামে কার্ড দেবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাদের।’’
এসআইআর-এর মাধ্যমে দেশকে অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করার অজুহাতে ঘুরপথে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করতে চাইছে বিজেপি, এমন অভিযোগ তুলে পথে নেমে প্রতিবাদে সরব হয়েছে এসইউসি। তারই অংশ হিসেবে এ দিন শিয়ালদহের কোলে মার্কেট, যাদবপুর ৮বি-তে প্রতিবাদ-সভা করেছে তারা।