• জয়ের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপনে এক সব দল
    আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
  • রাজনীতির ময়দানে দূরত্ব ছিল। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্কে তা বাধা হয়নি। বীরভূমে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়া অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরে শোকজ্ঞাপনে এক হয়ে গেল সব দলই।

    সোমবার কলকাতার একটি হাসপাতালে প্রয়াত হন জয়। শেষ কয়েক বছরে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালেও বিজেপির টিকিটে ২০১৪ সালে বীরভূম কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে এবং ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে সিউড়ি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জয়। মাত্র ৬১ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সহকর্মী থেকে ও জেলার বিজেপি নেতারা।

    বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৪ সালে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিল বিজেপি। কারণ ওই কেন্দ্র শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন চলচ্চিত্র জগতে তাঁর একদা সহকর্মী, তারকা অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে শতাব্দী রায়কে আক্রমণ করেছিলেন বহুবার। তবে ভোটের লড়াইয়ে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। তৃতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যে সাময়িক ‘দূরত্ব’ হয়েছিল, সে কথা আর মনে রাখতে চান না বীরভূমের চার বারের সাংসদ শতাব্দী রায়।

    সোমবার শতাব্দী বললেন, ‘‘অভিনেতা হিসেবে জয় আমার বন্ধু ছিল। প্রথম দিকে অনেক কাজ আমরা একসঙ্গে করেছি। ও বড় পরিবারের ছেলে। রাজনৈতিক করণে আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তবে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে নিয়মিত কথা হত।’’ ওঁর পরিবারের সদস্য, ওঁর চিকিৎসকের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন বলে জানান শতাব্দী। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝের অংশ আর মনে রাখতে চাইনি।’’ একদা সহকর্মী, বন্ধুর অকালপ্রয়াণে শতাব্দীর আক্ষেপ, ‘‘আসলে নিজের জীবনটা বড় অগোছালো করে ফেলেছিল। তাই এত তাড়াতাড়ি চলে গেল। এটা তো চলে যাওয়ার বয়স নয়।’’

    জয়ের আর এক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম। ২০১৬ সালে সিউড়ি বিধানসভা আসনে রামচন্দ্র ডোমের প্রতিপক্ষ ছিলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তাঁর প্রয়াণের খবরে রামচন্দ্র বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র জগতের মানুষ, বিশিষ্ট অভিনেতা হিসেবে সকলেই ওঁকে চিনতেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হতেই পারে, তবে তাঁকে পরিশীলিত মানুষ বলে মনে হয়েছে।’’ রামচন্দ্রের সংযোজন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। তবে সৌজন্য সাক্ষাত, শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’’

    ব্যক্তিজীবনে তারকা হলেও কাছ থেকে মেলামেশা করার পর জয় সম্পর্কে ধারণাই বদলে দিয়েছিল বীরভূমের বিজেপির দলের নেতা কর্মীদের। অর্জুন সাহা তখন জেলা বিজেপি সভাপতি। তিনি বলছেন, ‘‘খুব ভাল মানুষ। সহজে মিশতেন। সকলকে সম্মান করতেন।’’ অর্জুনের স্মৃতি, ‘‘খেতে খুব ভালবাসতেন। কোনওদিনই তারকাসুলভ আচরণ করেননি। আমার বাড়িতে খুব তৃপ্তি করে খেয়েছেন।’’ জয় খোলা মনের মানুষ ছিলেন বলে জানাচ্ছেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার বর্তমান সভাপতি ধ্রুব সাহা। প্রার্থীপদ ঘোষণার পর ধ্রুবই কলকাতার বাড়িতে গিয়ে প্রথম জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ধ্রুব এ দিন বলেন, ‘‘বীরভূম নিয়ে ওঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। চেষ্টা করব সে সব পূরণ করার।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)