এ বছর জাতীয় শিক্ষক সম্মান পাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তনুশ্রী দাস। তনুশ্রী খড়্গপুর গ্রামীণের হিজলি সংলগ্ন কুচলাচাটি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে তাঁকে পুরস্কৃত করবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
এ বার দেশের ৪৫ জন জাতীয় শিক্ষক সম্মান পাচ্ছেন। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দু’জন। এঁদেরই এক জন তনুশ্রী। জাতীয় শিক্ষক সম্মান প্রাপকদের নামের তালিকা সোমবারই প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনে থাকা স্কুলশিক্ষা বিভাগ। রাজ্য মারফত ওই তালিকা জেলায় এসেছে। আনন্দ সংবাদ পেয়ে তনুশ্রী বলছেন, ‘‘এই পুরস্কার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।’’ আগামী ৩ সেপ্টেম্বর দিল্লি পৌঁছবেন তনুশ্রী।
স্কুলের ভোল বদলে ফেলেছেন তিনি। নানা ভাবে সাজিয়ে তুলেছেন স্কুল চত্বর। দেওয়াল থেকে শ্রেণিকক্ষ— অভিনবত্ব সবেতে। স্কুলের পরিকাঠামো থেকে পড়াশোনার মান, সবই বেড়েছে। তারই স্বীকৃতি হিসাবে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পাচ্ছেন কুচলাচাটি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।
২০২০ সালে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পেয়েছেন। এই স্কুলও একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। যেমন, ২০২২ সালে ‘স্বচ্ছ বিদ্যালয়’ পুরস্কার, ওই বছরই ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কার। চলতি বছরে সমগ্র শিক্ষা মিশনের উদ্যোগে জেলাব্যাপী ‘শিখন শিক্ষণ উপকরণ’ প্রতিযোগিতায় জেলার স্কুলগুলির মধ্যে প্রথম হয়েছে এই স্কুল। দিন কয়েক আগে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির (শর্টফিল্ম) প্রতিযোগিতা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও পশ্চিম মেদিনীপুর প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে। উদ্দেশ্য, নাবালিকা বিয়ে রোধে সচেতনতা বাড়ানো। দু’টি বিভাগ ছিল। স্কুলের উদ্যোগে নির্মিত বিভাগে ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি এসেছিল। সেখানেও প্রথম হয়েছে এই স্কুলের নির্মিত ছবি।
তনুশ্রীর বাড়ি খড়্গপুরের প্রেমবাজারে। তাঁর শিক্ষকতা শুরু ১৯৯৯ সালে। ২০১৬ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কী নেই এই স্কুলে! ‘ব্যাঙ্ক’, ‘হাসপাতাল’, সব আছে। ছেলেমেয়েদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, প্রাথমিক চিকিৎসা হয় ‘শুশ্রূষা হাসপাতালে’। পড়ুয়াদের নীতিশিক্ষা থেকে শৃঙ্খলাবোধ, স্বাস্থ্য সচেতনতা, সমাজ সচেতনতার পাঠও মেলে। শ্রেণিকক্ষের সিলিংয়ে চোখ মেললেই দেখা যায় ‘সপ্তর্ষিমণ্ডল’, ‘কালপুরুষ’। সে ভাবেই সাজানো সবটা।
তনুশ্রী বলছেন, ‘‘এই সম্মান আমার একার নয়, স্কুলের সকলের।’’ আর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির বক্তব্য, ‘‘ওঁকে শুভেচ্ছা। এটা জেলার জন্যও গর্বের।’’