ধানের জমি ফাটিয়ে দামোদরের জল ঢুকছে গ্রামে। লাগাতার বৃষ্টি আর বিভিন্ন ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে ফুলেফেঁপে উঠেছিল দামোদর। জল নামতেই খণ্ডঘোষের শশঙ্গা পঞ্চায়েতের গৈতারনপুরের চরমানার বড় অংশে ভাঙন দেখা গিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। নদের পাড়ের বাসিন্দারা সরে যেতে শুরু করেছেন। সোমবার এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সেচ দফতরের কর্তারা।
জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, “পাড় বাঁধানোর কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।” কয়েক দিন আগে ‘আপনাদের পাড়া, আপনাদের সমাধান’ শিবিরে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি খণ্ডঘোষে এসেছিলেন। এলাকাবাসী ভাঙন রোধের দাবি জানিয়েছেন তাঁর কাছে। বিধায়ক (খণ্ডঘোষ) নবীনচন্দ্র বাগ বলেন, “জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে ভাঙন রোধের আর্জি জানানো হয়েছে।” শশঙ্গা পঞ্চায়েতের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কবিতা সরকার বলেন, “আমরা আতঙ্কে রয়েছি। খাস জমি, পাট্টা জমি জলে তলিয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি।”
সোমবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে থাকা ধানের জমি ফাটিয়ে দামোদর গ্রামের ভিতরে ঢুকতে শুরু করেছে। পাড়ে থাকা বাড়ির অস্থায়ী কাঠামো, মুড়ি কারখানা থেকে শুরু করে আসবাব-সহ অন্য সরঞ্জাম তুলে নিয়ে অন্যত্র থাকতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, জল কমতেই গত দু’দিন ধরে হু হু করে ভাঙন শুরু হয়েছে। দামোদর থেকে গ্রামের দূরত্ব মেরেকেটে ১৫০ মিটার। ভাঙন রোধ করতে না পারলে সাড়ে তিন হাজার বাসিন্দার গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এলাকাবাসীর একাংশ জানান, ১৪ বছর আগে এ রকমই ভাঙনের কবলে পড়েছিল গ্রাম। তার পর দফায় দফায় ভাঙন রোধের জন্য বোল্ডার ফেলা হয়েছে। তারের জালে বোল্ডার ফেলে পাড় বাঁধানো হয়েছিল। কিন্তু সেই পাড় এখন দামোদরে হারিয়ে গিয়েছে। আর সে কারণে, জমি গিলতে আর বাধা পাচ্ছে না বর্ষার দামোদর। তাঁদের কথায়, অত্যাধিক বালি তোলার কারণে দামোদর গতি বদলে গ্রামের দিকে বইছে। টানা বৃষ্টি আর জল ছাড়ার জন্য দামোদর ভরে উঠেছিল। জল নামতেই পাড় ভাঙতে শুরু করেছে।
এলাকার বাসিন্দা সুধারানী দাস জানিয়েছেন, নদী থেকে ১০ ফুট দূরে তাঁর বাড়ি। সন্ধ্যার পরে বাড়িতে থাকতে পারেন না। সমীর সরকার নামে এক গ্রামবাসী বলেন, “বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ৯১টি বাড়ি হয়েছে। ভাঙনের জন্যে বাড়িগুলি কি থাকবে, এই প্রশ্ন ঘুরছে।”
মুড়ি ব্যবসায়ী বাপি রায় বলেন, “আমার মুড়ির কারখানাও ভাঙনের মুখে। কয়েক দিনের মধ্যেই সব বদলে গেল।”