বায়না মিলেছে, ভিন্ রাজ্যে যেতে তবু আশঙ্কায় ঢাকিরা
আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
প্রায় দেড় দশক ধরে প্রতি বছর পুজোয় ভিন্ রাজ্যে ঢাক বাজাতে যান তাঁরা। কোনও সমস্যা বা আশঙ্কার কথা কখনও মাথায় আসেনি। এ বারও মাস তিনেক আগে বায়না হয়েছে। কিন্তু তার পরে নানা খবরে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে আউশগ্রামের ঢাকি সুকান্ত দাস, নীরেন দাসদের মনে। বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থা, পুলিশি ধরপাকড়ের কথা শুনে আতান্তরে পড়েছেন তাঁরা। পুজোয় ঢাক বাজাতে গিয়ে তেমন সমস্যায় যাতে না পড়তে হয়, সে জন্য আগে থেকে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
ঢাকি নীরেন দাস জানান, প্রায় ১৬-১৭ বছর গুজরাতে যাচ্ছেন ঢাক বাজাতে। কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। যে এলাকায় পুজো, সেখানে কর্মসূত্রে অনেক বাঙালি থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু রাস্তায় বা ট্রেনে কোনও সমস্যায় পড়লে কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’’ তাঁর ছেলে সুকান্ত জানান, মাস তিনেক আগে বায়না হয়েছে। তখনই উদ্যোক্তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ওখানে গেলে তাঁদের কোনও সমস্যা হবে কি না। দিন তিনেক আগেও ফোনে একই কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু ভিন্ রাজ্যে বাঙালিদের উপরে যে ভাবে হেনস্থা হচ্ছে, তাতে একটা ভয় তো কাজ করছেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে ভিন্ রাজ্যে যাই বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য। এমন সমস্যা তৈরি হলে তো মুশকিল।’’
তাঁরা জানান, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে স্থানীয় থানাকে জানিয়ে রওনা হবেন তাঁরা, যাতে কোনও সমস্যায় পড়লে এখানকার পুলিশ সাহায্য করতে পারে। এর আগে কখনও এ ভাবে থানাকে জানিয়ে যাননি বলে জানান তাঁরা। পঞ্চমীর দিন তাঁরা গুজরাত পৌঁছবেন। দশমীর রাতে ফেরার ট্রেন ধরবেন। উদ্যোক্তারা তাঁদের হাওড়া-আমদাবাদ এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে দিয়েছেন। পাঁচ জনের দলে ওয়ারিশপুর থেকে তিন জন ও মানকর থেকে দু’জন পুরোহিত যাবেন। বীরভূমের কয়েক জন ঢাকিও গুজরাতে যাবেন, জানান নীরেনরা। নীরেনের স্ত্রী মালতি, পুত্রবধূ সুপ্রিয়ারা বলেন, ‘‘দুশ্চিন্তায় রয়েছি। দেবীর কাছে প্রার্থনা করব, বাড়ির লোক যেন ভালয় ভালয় ফিরে আসেন।’’ আউশগ্রামের মাজুরিয়া থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে দুর্গাপুজোর সময়ে ঢাক বাজাতে যাবেন নিমাই রুইদাসেরা। তাঁরাও এখন চিন্তিত।
রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় ওঁদের পাশে আছেন। কোনও অসুবিধা হলে আমাদের হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে, সেখানে ওঁরা জানাতে পারবেন। আমরা জানলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার আগে কেউ এ ধরনের আশঙ্কায় ভুগলে, জানাতে পারেন। আমরা তাঁদের যোগাযোগের তথ্য রেখে দেব। কোনও সমস্যা হলে সহায়তা করা হবে।’’