ছোট থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই, নাসার 'নর্থস্টার' পুরস্কারে সম্মানিত গৌতমের ছেলেবেলা কেমন ছিল? জানালেন তাঁর দিদিরা ...
আজকাল | ২৬ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলার মাটি বারবার প্রমাণ করেছে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার পর কখনওই অসম্ভব নয়। হুগলি জেলার কোন্নগর নবগ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান, স্কুল জীবনে হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা চালিয়ে এক কিশোরের আজ পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পথপ্রদর্শকের আসনে। তিনি ডঃ গৌতম চট্টোপাধ্যায়। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবটারির এক উজ্জ্বল নাম।
নাসা এবার তাঁকে সম্মানিত করতে চেয়েছেন তাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মান "নর্থস্টার" পুরস্কার দিয়ে। যে নামের মধ্যেই আছে গভীর তাৎপর্য। 'ধ্রুবতারা' যে আকাশেই জ্বলুক না কেন, সে সর্বদা দিক নির্দেশ করে, অন্যকে পথ দেখায়। ঠিক তেমনই হুগলি জেলার কোন্নগরের নবগ্রাম এলাকার গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর গবেষণা ও অন্যান্য নেতৃত্ব দিয়ে নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।
'নর্থস্টার' পুরস্কার নাসার সর্বোচ্চ স্বীকৃতিগুলির মধ্যে একটি। এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে।এই পুরস্কার পাচ্ছেন নিজের কাজের মাধ্যমে ও অন্যকে উজ্জীবিত করার জন্য। অর্থাৎ তিনি শুধু নতুন আবিষ্কারের পথিকৃথই নন, অন্যদের বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা নেন।
গৌতমের যাত্রা পথ কোনও রাজকীয় প্রাসাদ থেকে শুরু হয়নি। দরিদ্র পরিবারে জন্ম আর ছোট থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই। কোন্নগরের নবগ্রামের এক সাধারণ স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফাউন্ড মেডেল রিসার্চ এর কাজ আর তারপর দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নাসার কর্মরত বিজ্ঞানী। এই পথ চলা এক কথায় এক রূপকথার মতো। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মহাকাশ গবেষণার জন্য একের পর এক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন।
তবে শুধু গবেষণা নয়, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জগতেও তিনি ইতিমধ্যে অসামান্য সম্মান পেয়েছেন। গত বছর নিউ ইয়র্ক থেকে তিনি পেয়েছেন আমস্ট্রং মডেল রেডিও ওয়ালসের বিজ্ঞানের অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মান।
আজকের এই সাফল্যের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর গল্প নিছক ব্যক্তিগত নয়। বাংলা, ভারতের এবং বিশ্বে তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। যখন কেউ ভাবে যে বড় স্বপ্ন দেখা কেবল ভাগ্যবানের জন্য, তখন গৌতম বড় স্বপ্ন দেখায়, কেবল ভাগ্যবান নন। তখন গৌতম চট্টোপাধ্যায় প্রমাণ করেন পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে গ্রাম বাংলার অন্ধকার থেকেও ধ্রুবতারা হয়ে ওঠা যায়।
গৌতমের দিদি লিলি আচার্য বলেন, 'আমরা ছোট থেকেই খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি। আর একটা ঘরে সব ভাই বোনরা থেকে পড়াশোনা করেছি। ভাই ছোট থেকেই বিজ্ঞান নিয়ে থাকতো। তার ভালবাসা ছিল বিজ্ঞান। আজ গর্বে বুক ভরে উঠছে যে ভাই আজ এই সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে।'
বোন ডলী চক্রবর্তী বলেন, 'ভাই এই জায়গায় পৌঁছেও তার পা মাটিতেই আছে। ভাই আমাদের মাটির মানুষ। সব সময় আমাদের সঙ্গে মায়ের সঙ্গে কথা চলতেই থাকে।যখন সে এখানে আসে, তখন সে একজন সাধারণ মানুষের মতোই সকলের সঙ্গে মেশে। ভাই আগামী প্রজন্মকে সত্যি পথ দেখাচ্ছে।'
কোন্নগড় পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন দাস বলেন, 'এটা সত্যি গর্বের যে একজন বাঙালি আজ আবার বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠ আসন পাচ্ছেন। তিনি আমাদের এলাকার ছেলে আর একটা বাংলা মিডিয়াম স্কুল থেকে পড়াশোনা করে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বাঙালিরা সব সময় শ্রেষ্ঠ জায়গা নিয়েছে।আর এখন দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, এটা লজ্জার।'
নবগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপ প্রধান গৌর মজুমদার বলেন, 'গৌতম আমাদের খুব কাছের ছেলে আর আমাদের এলাকার ছেলে। এটা আজ খুবই গর্বের বিষয়।আর একজন এত উপরে গেলেও যে মাটির মানুষ থাকা যায় সেটা গৌতমকে দেখে জানা যায়। আজ সত্যি গর্বের দিন।'
আর গৌতমের এই সাফল্যের খবর এলাকায় পৌঁছতেই খুশির হওয়া কোন্নগরের নবগ্রাম সহ সমগ্র হুগলি জেলায়। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, 'গৌতম আমাদের গর্ব। আমাদের এই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যে উঠে যে এই জায়গায় পৌঁছনো যায়, সেটা গৌতম করে দেখিয়েছেন।গৌতম সবার কাছে আইডল। কীভাবে সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটা গৌতম শিখিয়েছেন সবাইকে। এটা শুধু আমাদের এলাকা নয়, আমাদের বাংলার গর্বের, আমাদের দেশের গর্বের দিন।'