সমকামী সম্পর্কের ব্ল্যাকমেল করতে গিয়েই খুন হয়েছেন বৃদ্ধ, একাধিক পুরুষের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল অভিযুক্ত ...
আজকাল | ২৬ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সমকামী সম্পর্কই ডেকে এনেছিল বিপদ। হাওড়ায় বৃদ্ধ খুনের কিনারা করল পুলিশ। এই খুনের পিছনে উঠে এসেছে অভিযুক্তর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা এবং তার জেরেই শেষপর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ড। ঘটনায় প্রসেনজিৎ চৌধুরী নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ। ধৃত তার অপরাধ কবুল করেছে বলেই পুলিশ দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার সালকিয়া অরবিন্দ রোডে শনিবার ২৩ আগস্ট অসীম দে নামে নামে বছর ৬৪-র এক বৃদ্ধের দেহ তাঁর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভিতে সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে ওই আবাসনে ঢুকতে ও বেরতে দেখে। ফুটেজ অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি ফ্ল্যাটে ঢুকে দু'ঘন্টা পর বেরিয়ে যায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে অসীমবাবুর হাতের মূল্যবান আংটি ও মোবাইল ফোন খোয়া গিয়েছে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই আবাসনের তিনতলায় নিজের ফ্ল্যাটে মাঝেমাঝে একাই রাতে থাকতেন অসীমবাবু। ওই ফ্ল্যাট থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে মাস চারেক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে অসীমবাবুর সঙ্গে আলাপ হয় প্রসেনজিতের। পেশায় কাপড় বিক্রেতা প্রসেনজিৎ মঙ্গলাহাট, গোবরডাঙার হাট-সহ বিভিন্ন হাটে কাপড় বিক্রি করত। তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে আলাপের পর মাসখানেক আগে সে ও অসীমবাবু সালকিয়ার বাঁধাঘাটে সাক্ষাৎ করেছিল। এরপর প্রায়ই তারা নিজেদের মধ্যে মোবাইলে বার্তা বিনিময় করত। সেখানে যৌন বিষয়ক নানা কথাবার্তা হত। ধীরে ধীরে এভাবেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু'জনের মধ্যে ভিডিও কল চলার সময় অসীমবাবু প্রসেনজিতের বেশ কিছু গোপন ছবির স্ক্রিনশট রেখে দেন। যা দেখিয়ে তিনি প্রসেনজিৎকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন বলে অভিযোগ। যা নিয়ে প্রসেনজিতের যথেষ্টই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রসেনজিৎকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠান অসীমবাবু। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রসেনজিৎ আসতে অস্বীকার করলে তার গোপন ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকিও তাকে দেওয়া হয়। শেষপর্যন্ত আসতে রাজি হয় প্রসেনজিৎ।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে প্রসেনজিৎ মদ, কচুরি ও তরকারি কিনে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর ফ্ল্যাটে অসীমবাবু ও প্রসেনজিৎ একসঙ্গে বসে মদ্যপান করে ও খাবার খায়। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও তৈরি হয়। এরপরেই গোপন ছবি নিয়ে তার সঙ্গে অসীমবাবুর বচসা শুরু হয়। শেষপর্যন্ত রাগের মাথায় প্রসেনজিৎ অসীমবাবুর মাথা ফ্ল্যাটের দেওয়ালে ঠুকে দেয় এবং আঘাতের জেরে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের জন্য অসীমবাবুর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। ফ্ল্যাট ছাড়ার আগে সে মৃতের ফোন এবং আংটি নিয়ে নেয়। পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আততায়ীর সন্ধান পায়। রবিবার গোবরডাঙায় তার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশি জেরার মুখে অভিযুক্ত জানিয়েছে, তার একাধিক সমকামী সঙ্গী ছিল। যাদের একজনকে ওই বৃদ্ধের আংটিও সে উপহার দিয়েছে।