• ভোটব্যাংক 'সুরক্ষা' কবচ? SIR বিতর্কে CAA শিবির! ঠাকুরবাড়ি থেকে বিলি হচ্ছে 'ধার্মিক কার্ড'...
    ২৪ ঘন্টা | ২৫ আগস্ট ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: অভিযোগ SIR-এর আগে বাংলায় ঠাকুরবাড়ি থেকে দেদারসে বিলি হচ্ছে ‘ধর্মীয় কার্ড’। মতুয়া মহল থেকে নাকি দুই লাখ কার্ড জারি। বাংলার রাজনীতিতে মতুয়া সম্প্রদায় সবসময় ক্ষমতার চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই সম্প্রদায়কে ঘিরে প্রায়ই রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখা যায়। এখন খবর, সম্প্রতি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান সংগঠন অখিল ভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ বনগাঁর ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি প্রায় দুই লক্ষ ‘ধর্মীয় কার্ড’ জারি করেছে। এর উদ্দেশ্য হল মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (CAA) এর আওতায় নাগরিকত্বের আবেদন করতে সহায়তা করা। 

    আসলে, এসআইআরের সতর্কবার্তার মাঝেই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় সারা রাজ্য থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ জড়ো হচ্ছেন। তারা ঠাকুরনগরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বাসভবন তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান কার্যালয় থেকে ‘মতুয়া’ সদস্যপদ কার্ড এবং ধর্মীয় শংসাপত্র নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। অখিল ভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক মহিতোষ বৈদ্য জানিয়েছেন, মহাসঙ্ঘ কর্তৃক জারি করা এই ধর্মীয় শংসাপত্র একটি প্রয়োজনীয় নথি, যা প্রমাণ করে যে তারা হিন্দু।

    বড় সংখ্যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ঠাকুরবাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সারা রাজ্য থেকে প্রচুর মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছাচ্ছেন এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ ধর্মীয় কার্ড জারি করা হয়েছে। সিএএ বিজ্ঞপ্তি ও এসআইআরের আশঙ্কার মাঝেই সাম্প্রতিক দিনে ধর্মীয় শংসাপত্রের সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষে পৌঁছেছে।

    হরিচাঁদ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত মতুয়া সম্প্রদায় প্রায় ১.৭৫ কোটি মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্র, যাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে বনগাঁ, বারাসাত, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে। মতুয়া সম্প্রদায় মূলত ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ১৯৫০-এর দশক এবং বাংলাদেশ তৈরির পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গে আসে। নমশূদ্র, যার অন্তর্ভুক্ত মতুয়ারা, রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তফশিলি জাতি।

    সচেতনতা শিবির চলছে

    এক জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, অখিল ভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্ব সচেতনতা বাড়ানো ও আবেদন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য বিশেষ সিএএ শিবিরের আয়োজন করছে। উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলা— মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনায় এই সচেতনতা শিবির চলছে, যেখানে মতুয়া জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বৈদ্য জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতেও একই ধরনের শিবির আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে মতুয়া জনসংখ্যা রয়েছে।

    ২০২৪ সালের মার্চে লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র সরকার সিএএ-র নিয়মাবলি কার্যকর করে। এর মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪-র আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের— হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিস্টানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া শুরু হয়।

    কত বড় ভোট ব্যাংক?

    বাংলার রাজনীতিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামশূদ্র হিন্দুদের সঙ্গে যুক্ত এই সম্প্রদায় রাজ্যের প্রায় ১৭-২০ শতাংশ জনসংখ্যা এবং প্রায় ১.৫ কোটি ভোটার। নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এদের সবচেয়ে বড় উপস্থিতি রয়েছে। অনুমান করা হয়, মতুয়া ভোট সরাসরি ৩০-৪৫টি বিধানসভা আসনে প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিটি নির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূল— দুই দলই এই সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়।

    বিজেপি না তৃণমূল, কার কত লাভ?

    ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া-প্রধান এলাকায় বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৪১.৫% ভোট, আর তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৪৩% ভোট। এর পর বিজেপি সিএএ-কে কেন্দ্র করে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের প্রচার আরও জোরদার করে। অন্যদিকে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মতুয়া-প্রভাবিত এলাকায় প্রায় ২৮টি আসন জেতে, আর তৃণমূল জেতে ২১টি আসনে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)