প্রয়াত অভিনেতা তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই সিওপিডি-র সমস্যায় ভুগছিলেন জয়। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। ১৫ অগস্ট তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল হাসপাতালে। ১৭ অগস্ট ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। অভিনেতার সহকারী ছোটু জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর চার ঘণ্টা পরে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হন। সুখেন দাস, অঞ্জন চৌধুরীর একাধিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘হীরক জয়ন্তী’, ‘মিলন তিথি’, ‘জীবন মরণ’, ‘নাগমতি’-সহ বহু ছবির নায়ক ছিলেন জয়। তাঁর আরেক পরিচয় কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যয়ের প্রাক্তন স্বামী।
বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে তিনি একাধিক হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন, পাশাপাশি রাজনৈতিক মঞ্চেও সক্রিয় ছিলেন দীর্ঘদিন। বিদেশ সরকার পরিচালিত ‘অপরূপা’ (১৯৮২) ছবিতে দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন জয়। নবেন্দু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘চপার’ (১৯৮৭) ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। জয়ের ‘হীরক জয়ন্তী’ (১৯৯০) সিনেমাটি বক্স অফিসে তুমুল হিট হয়েছিল। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত এই ছবিতে প্রশংসিত হয় জয় ও চুমকি চৌধুরীর জুটিও। এমনকী, টলিপাড়ায় রটে যায় চুমকি ও জয়ের প্রেমগুঞ্জনও।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়ান জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার বর্তমান সাংসদ তথা টলিউড অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের কাছে হেরে যান জয়। এরপর ২০১৯ সালে উলুবেড়িয়া থেকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে সাজদা আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। ২০২১ সালের নভেম্বরে, অভিনেতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন, তিনি আর বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করবেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ক্ষোভ উগড়ে দেন জয়।
দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সেই চিঠিতে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘টানা দু’বছর ধরে আপনার কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইছি। আজও তা পেলাম না। অসুস্থতার জন্য সাহায্য চেয়েছিলাম, তা পাইনি। ২০১৭ সালে আপনি আমাকে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করেছিলেন। কিন্তু এবার সেই পদ থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পদটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজীব ব্যানার্জিকে। সেই রাজীব ব্যানার্জি বিজেপির মুখে চড় মেরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।’
জয় আরও লেখেন, ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দল ও আপনার জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছি। এসব করতে গিয়ে মার খেয়েছি। বুকে, মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যর বিজেপি নেতারা আমাকে বরবারই অবহেলা করেছেন। কলাইকুন্ডাতে ২০১৭ সালে দেখা হওয়ার সময়েই বিষয়টি আমি আপনাকে বলেছিলাম। তারপর ১০ দিনের মধ্যে আপনি আমাকে জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত করেন। তবে এখন আপনাকে জানাই, আমি খুব শীঘ্রই দল ছেড়ে দিচ্ছি। আমাকে আশীর্বাদ করুন।’