ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে ইতিহাস পড়ার আবেদন জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উল্লেখ্য, বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষার অপমানের প্রতিবাদে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শনি ও রবিবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসেছে তৃণমূলের ‘জয়হিন্দ বাহিনী’। এই দলীয় শাখার রাজ্য সভাপতি কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে টানা দু’দিন ব্যাপী চলল অবস্থান বিক্ষোভ।
রবিবার ধরনা মঞ্চে উপস্থিত হয়ে অরূপ দৃপ্ত-কণ্ঠে জানালেন, বাংলার সম্মান বাঁচাতে তৃণমূল রক্ত দিতেও রাজি। তাঁর ভাষায়, ‘সংবিধান স্বীকৃত বাংলা ভাষার অপমান বাঙালি মেনে নেবে না। কেন্দ্র ভেবেছিল, বাংলাকে হাতে না হলেও ভাতে মারা যাবে! কিন্তু আমাদের মাথার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াই কেবল তৃণমূলের একার নয়, আপামর বাংলার মানুষের। বিজেপি নেতারা ইতিহাস পড়ুন, জানুন স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অবদান কতটা। রক্ত দেব, বাংলার অপমান সহ্য করব না। যত আপনারা সন্ত্রাস চালাবেন, বাংলা আরও গর্জে উঠবে।’ এরপরই মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অরূপ বলেন, ‘ছাব্বিশে আরও বড় খেলা হবে, খেলার জন্যই তৃণমূল কংগ্রেস।’
মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এদিন বাংলা ভাষার অতীত গৌরব স্মরণ করতে গিয়ে খানিক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। মঞ্চ থেকে বাঙালি বিপ্লবীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানান। তাঁর কথায়, ‘দেশ স্বাধীনে বিজেপির কোনও অবদান আছে? যে সাভারকার জেল মুক্তির জন্য ব্রিটিশদের পায়ে পড়েছিলেন, তাঁকে বিজেপি ভগবান মনে করে। আর যে বাঙালি ব্রিটিশের কাছে মাথানত করবে না বলে সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন, তাঁদের প্রতি অবমাননা?’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘মুখে বড় কথা প্রধানমন্ত্রীর! আজ দেশে বেকারত্ব, কালোবাজারি বাড়ছে। কোথায় ২ কোটি বেকারের চাকরি, কোথায় ১৫ লক্ষ টাকা? গুজরাটের বহু দাপুটে নেতা কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদী তাদের চুলও স্পর্শ করতে পারেননি!’ এরপরই আরজি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষণ, দলিত হত্যার মতো ঘটনায় এগিয়ে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন রাজ্য! বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়? অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের কোটি কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দেওয়া হল কেন?’
কঠোর হলেও দলীয় সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোজাসাপ্টা বক্তব্য, ‘বাংলার সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইলে উল্টো করে জলে ফেলে দেব। গণতান্ত্রিক দেশের পরিকাঠামো যারা নষ্ট করতে চায়, ভাষা সন্ত্রাস ছড়ায়, ধর্মের ভিত্তিতে দাঙ্গা সৃষ্টি করে, তারাই বিজেপি!’ তাঁর মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষ শতবর্ষে একবার জন্ম নেন এবং তাঁরাই হন পরিবর্তনের কান্ডারী। অন্যদিকে, আরএসএস-কে ‘সন্ত্রাসবাদী দল’ বলে কটাক্ষ করলেন কার্তিক।
তাঁর ভাষায়, ‘এসআইআর, এনআরসি, নোটবন্দি ইত্যাদি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশবাসীকে মেরে ফেলছে এই দল। নোটবন্দির সময় অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে আরএসএস-কে দেওয়া হয়েছিল। রাম মন্দিরের ট্রাস্টিও তারা। ভারতে থাকবে শুধু আদানি-আম্বানি এবং আরএসএস। দেশের আমজনতা বিজেপির কাছে চাকর!’ এদিনের ধরনা মঞ্চে অরূপরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, বিধায়ক মদন মিত্র-সহ প্রমুখ।