• কেন স্ত্রীকে খুন করে তাঁর হৃৎপিণ্ড নিয়ে ঘুরছিল স্বামী? পুলিশি জেরার জবাব দিল অভিযুক্ত ...
    আজকাল | ২৪ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: খুনের পর হাতে স্ত্রীর রক্তমাখা হৃৎপিণ্ড। তাই নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বামী। শুক্রবার এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়ির বাসিন্দারা। পুলিশের হাতে শেষপর্যন্ত গ্রেপ্তার হয় অভিযুক্ত স্বামী রমেশ রায়। শনিবার তাকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক অভিযুক্তকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অভিযুক্তকে এবিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলে, 'স্ত্রী আগে মেরেছিল'। ঘটনায় আতঙ্কিত এবং বাবার উপর চরম ক্ষোভ নিয়ে রমেশের পরিজন ও সন্তানরা জানায়, রমেশ যেন শাস্তি পায়। যেন আর ছাড়া না পায়। 

    শুক্রবার ময়নাগুড়ির ব্যাংকান্দি এলাকায় আচমকাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায় হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা রমেশ রায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যাগের মধ্যে রক্তমাখা তার স্ত্রী দীপালি রায়ের (৪৫) হৃৎপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গ। আতঙ্কে ভয়ে তার সামনে কেউ যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। ঘটনায় রীতিমতো হকচকিয়ে যান সকলেই। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নীলিমা রায় বলেন, এদিন সকালে ৮টা নাগাদ তাঁকে এক যুবক ফোন করে বলেন রমেশ তাঁর স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন কাটা অংশ একটি ব্যাগে ভরে নিয়ে তাঁদের বাড়ি আসে এবং ব্যাগ খুলে সেগুলি দেখায়। এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁর বাড়ির লোকজন। ভয়ে তাঁরা সিঁটিয়ে যান। কোনোরকমে রমেশকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপরেই পঞ্চায়েত প্রধানকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। 

    ইতিমধ্যেই এই ঘটনা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু রায়, শ্যামল রায়রা জানান, শুক্রবার গায়ে রক্তমাখা অবস্থায় একটি ব্যাগ হাতে রমেশকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে যখন এলাকার বাসিন্দারা তার বাড়ি যান তখন দেখা যায় মেঝেতে রক্তের দাগ। বিছানায় এদিক ওদিক রক্ত লেগে আছে। এরপরেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় সকলের কাছে। তাঁরা বুঝতে পারেন স্ত্রীকে খুনের পর তাঁর দেহাংশ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রমেশ। তার বাড়ির আশেপাশে পড়ে আছে স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন রক্তমাখা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ভয়ে কেউ আর তার বাড়ির দিকে যেতে সাহস করেনি। ইতিমধ্যেই খবর যায় পুলিশের কাছে। তারা আসছে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এলাকা থেকে চম্পট দেয় রমেশ। তার খোঁজে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েন পুলিশ কর্মীরা। বিস্তর খোঁজাখুঁজি করার পর শেষপর্যন্ত শিঙিমারি এলাকা থেকে রমেশকে ধরা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে স্ত্রীর দেহাংশ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে একটি ধারাল অস্ত্র। পুলিশের অনুমান, ওই অস্ত্রের সাহায্যেই রমেশ তার স্ত্রীকে খুন করেছে। পুলিশের অনুমান হয় অভিযুক্ত মানসিকভাবে অসুস্থ অথবা তার তীব্র ঘৃনা ছিল তার স্ত্রীর প্রতি। যে কারণেই খুনের পর শরীর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বের করেছে। পুলিশ অভিযুক্তের বাড়ির আশেপাশের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চেয়েছিল অভিযুক্তের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পদ কীরকম ছিল। পাশাপাশি রমেশের স্ত্রীর বাপের বাড়িতেও এবিষয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানা যায়। সেইসঙ্গে মৃতার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে সেগুলির ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয় তারা। শুক্রবার ময়নাগুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুবল ঘোষ জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। 

    তবে শনিবারও ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক খেয়াল করা গিয়েছে। অনেকের কাছেই বিষয়টি একটি দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে বলে জানাচ্ছেন। সেইসঙ্গে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন রমেশ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে অন্য কোনও কিছু ঘটাবে কিনা। অনেকেই জানাচ্ছেন, আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের মনে হয়েছে রমেশ একজন মানসিক রোগী। তার চিকিৎসা জেলে রেখেই হোক বলে মত তাঁদের। রমেশের এক আত্মীয় জানান, ব্যাপারটা ভাবাই যায় না যে একজন মানুষ তার স্ত্রীকে খুন করে তার হৃৎপিণ্ড কেটে বের করে সেটা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে! কিন্তু কেন এই খুন সে প্রসঙ্গে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যতবার রমেশকে জেরা করা হয়েছে ততবার সে জানায়, 'ও আগে মেরে ছিল'।
  • Link to this news (আজকাল)